শেষ সফর। মঙ্গলবার ধানবাদ স্টেশনে চন্দন পালের তোলা ছবি।
কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল এ বছরই তাঁদের রিপোর্টে কয়েক পাতা জুড়ে রেলের দোতলা ট্রেন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। প্রশ্নটা ছিল— পরিকল্পনা ছাড়া কেন কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করে ওই ট্রেন তৈরি করা হল। কেন তা চালানো গেল না?
এর পরই বছর দু’য়েক ধরে কারশেডে ফেলে রাখা দোতলা রেকগুলিকে ফের লাইনে নামাতে উদ্যোগী হন রেলকর্তারা। মাত্র ১৮ দিন আগে দোতলা ট্রেন ফের চালু হয় হাওড়া-ধানবাদ রুটে। কিন্তু এ বারও ‘রণে ভঙ্গ’ দিলেন রেলকর্তারা। মঙ্গলবারই দোতলা ট্রেন বন্ধের নোটিস জারি করেন পূর্ব রেল কতৃর্পক্ষ।
যাত্রীদের বক্তব্য, ট্রেনটির সময়সূচি সুবিধাজনক ছিল না। ভাড়া অনুযায়ী অন্য ট্রেনের মতো আরামও ছিল না দোতলা ট্রেনে। ট্রেন ছুটলেই নিচুতলার কামরার যাত্রীদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত ধুলোয় মাখামাখি হচ্ছিল। বাতানুকূল ট্রেনটির অত্যধিক ভাড়া নিয়েও আপত্তি উঠেছিল। তাই আগের মতো এ বারও প্রায় প্রতি দিন ওই ট্রেনে ২০ শতাংশের কম টিকিট বিক্রি হতো। রেল সূত্রের খবর, ২৩ অক্টোবর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত কার্যত ফাঁকা ট্রেন চালিয়ে বিপুল লোকসান হয়েছে। ‘ছট পুজো স্পেশাল’ বলে ওই দোতলা ট্রেন চালানো হলেও, তাতে একেবারেই ভিড় হয়নি।
মঙ্গলবার সফরের শেষ দিন ধানবাদে কলকাতাগামী দোতলা ট্রেনে উঠে দেখা যায়, নিচের তলায় যাত্রীসংখ্যা কার্যত শূন্য। দোতলায় বসে রয়েছেন হাতেগোণা কয়েক জন। এক জন জানালেন, তাঁদের পরিবারের কয়েক জন ধানবাদে ছট পালন করতে এসেছিলেন। তাঁরা এসেছিলেন ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেসে। কারণ ওই ট্রেনে ভাড়া অনেক কম। ট্রেনটি হাওড়া থেকে ছাড়েও সুবিধাজনক সময়ে। কিন্তু ফেরার সময় স্টেশনে দেরি করে আসায় কোলফিল্ড এক্সপ্রেস ধরতে পারেননি। তাই বাধ্য হয়ে দোতলা ট্রেনে বেশি ভাড়া দিয়ে যাচ্ছেন।
ধানবাদের বাসিন্দা রঘুবর প্রসাদের প্রশ্ন, সাধারণ মানুষের জন্য দোতলা ট্রেনটিকে ‘ছট স্পেশাল’ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তুর ভাড়া সাধারণের নাগালে ছিল না। হাওড়া যেতে পাঁচশো টাকার বেশি ভাড়া গুনতে হতো। যেখানে অন্য ট্রেনে ভাড়া তার অর্ধেক। যাত্রীদের বক্তব্য, সব বাতানুকূল কামরা না রেখে, কয়েকটি সাধারণ কামরা থাকলেও দোতলা ট্রেনে উঠতেন অনেকে।
রেল সূত্রের খবর, ছটের আগে কয়েক দিন হাওড়া-ধানবাদ রুটের কোনও ট্রেনে তিলধারনের জায়গা ছিল না। একমাত্র ফাঁকা যাতায়াত করেছে ডবল ডেকার ট্রেনটিই।
যাত্রীদের প্রশ্ন, ট্রেনটি ফের চালানো হলেও লোকসান যে কোনও ভাবে ঠেকানো যাবে না, তা রেলকর্তাদের অজানা ছিল না। আগেও তার প্রমাণ তাঁরা পেয়েছেন। তবে কেন ফের সেটিকে ১৮ দিন ধরে চালিয়ে কোটি কোটি টাকা ‘নষ্ট’ করা হল? প্রশ্ন উঠেছে রেলের অন্দরেও। তবে সদুত্তর মেলেনি রেলের আধিকারিকদের কাছে। তাঁরা শুধু বলছেন, ‘‘কেন এমন হল, তা বিশ্লেষণ করে দেখা হবে।’’