COVID-19

কোভিড মৃত্যু রুখতে আরও ৫ লক্ষ আইসিইউ শয্যা জরুরি, বলছেন দেবী শেঠি

না হলে পর্যাপ্ত আইসিইউ শয্যা, নার্স ও চিকিৎসকের অভাবে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা সামনের ৩/৪ মাসে লাগামের বাইরে চলে যাবে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২১ ১৫:৫৩
Share:

ফাইল ছবি।

দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে জরুরি ভিত্তিতে বাড়াতে হবে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)-এর শয্যার সংখ্যা। তার জন্য অক্সিজেন সরবরাহ থাকা সাধারণ শয্যাগুলিকেই উন্নততর করে তুলতে হবে। এর পাশাপাশি ট্রেনিং নিয়ে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষারত নার্স ও চিকিৎসকদেরও সামিল করতে হবে করোনাযুদ্ধে। না হলে পর্যাপ্ত আইসিইউ শয্যা, নার্স ও চিকিৎসকের অভাবে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা সামনের ৩-৪ মাসে লাগামের বাইরে চলে যাবে। ভয়ঙ্কর গতিতে বাড়বে সংক্রমণের হারও। একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকে এ কথা বলেছেন বিশিষ্ট কার্ডিয়াক সার্জন দেবী শেঠি।

Advertisement

তাঁর বক্তব্য, দেশজুড়ে অক্সিজেনের ঘাটতির পরেই এখন প্রায় সব সাংবাদমাধ্যমেরই শিরোনাম কোনও নার্স ও চিকিৎসক নেই বলে আইসিইউ-তে থাকা কোভিড রোগীদের মৃত্যু হচ্ছে। প্রথম ঢেউ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, দেশে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে আগামী ৩ থেকে ৪ মাস সংক্রমণের হার থাকবে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে। এখন দিনে ৩ লক্ষ মানুষ পরীক্ষায় কোভিড পজিটিভ হচ্ছেন। তাত্ত্বিক দিক থেকে এটা বলা যায় প্রতি ১ জন কোভিড পজিটিভের থেকে অন্তত ৫ জন সংক্রমিত হবেন, পরীক্ষা না করা হলেও। এর মানে, দিনে ১৫ লক্ষ মানুষ এখন সংক্রমিত হচ্ছেন। যদি ধরে নেওয়া যায় এঁদের ৫ শতাংশকে আইসিইউ-তে রাখার প্রয়োজন হবে, তা হলেও প্রতি দিন আরও ৭৫ হাজার আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থা করতে হবে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে। কিন্তু সারা দেশে এই মুহূর্তে হাসপাতালগুলির আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৭৫ হাজার থেকে ৯৫ হাজারের মধ্যে। যেগুলির একটিও খালি নেই। ফলে আর কয়েক দিনের মধ্যে বাড়তি ৫ লক্ষ আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হবে কোভিড রোগীদের।

এত অল্প সময়ে কী ভাবে আইসিইউ শয্যা এতটা বাড়ানো সম্ভব হবে?

Advertisement

দেবী জানিয়েছেন, তার জন্য হাসপাতালগুলির অক্সিজেন সরবরাহ থাকা সাধারণ শয্যাগুলির সঙ্গে জরুরি চিকিৎসার কয়েকটি যন্ত্র জুড়ে দিয়ে সেগুলিকে আইসিইউ শয্যায় বদলে ফেলার প্রয়োজন।

কিন্তু আইসিইউ তো আর কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করবে না। সেটা করবেন নার্স ও চিকিৎসকরা। অথচ অতিমারি শুরুর আগেই ভারতের হাসপাতালগুলিতে নার্স, চিকিৎসকের ঘাটতি ছিল ৭৬ শতাংশ। প্রথম ঢেউয়ের সময় যাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন করোনাযুদ্ধে তাঁরাও এখন কিছুটা ক্লান্ত।

সে ক্ষেত্রে দেবীর পরামর্শ, ‘‘এই কাজে এখন তরুণদের আনতে হবে। ভারতের মতো জনসংখ্যার দেশে কয়েক দিনে কয়েক লক্ষ তরুণকে করোনাযুদ্ধে সামিল করানোটা খুব দুরূহ কাজ নয়।’’

দেবী জানিয়েছেন, সারা দেশে এখন ২২ লক্ষ নার্স আছেন, যাঁরা বিএসসি স্তরের ট্রেনিং শেষ করে পরীক্ষায় বসার অপেক্ষারত। এঁদের এবং প্যারামেডিক্যালের ছাত্রছাত্রীদের এক বছরের জন্য পরীক্ষায় না বসিয়ে আপাতত সামিল করানো উচিত করোনাযুদ্ধে।

দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরও অভাব যথেষ্টই। দেবীর মতে, ‘‘চিকিৎসাশাস্ত্র ও অস্ত্রোপচারের বিভিন্ন শাখায় দেশে এখন এমন অন্তত ২৫ হাজার তরুণ চিকিৎসক রয়েছেন, যাঁদের ট্রেনিং প্রায় শেষ হওয়ার পর্যায়ে। ট্রেনিং বন্ধ রেখে এঁদেরও সামিল করানো উচিত করোনাযুদ্ধে। এ ছাড়াও ইনটেনসিভ কেয়ার কার্জিওলজি এবং এমার্জেন্সি মেডিসিনে হাজার হাজার ডিপ্লোমাপ্রাপ্ত রয়েছেন। তাঁদেরও কোভিড রোগীদের সেবার অনুমতি দেওয়া হলে সমস্যার অনেকটা সুরাহা হবে।’’

এ ছাড়াও স্নাতকোত্তর কোর্সে সুযোগ পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রায় দেড় লক্ষ তরুণ চিকিৎসক। স্নাতকোত্তরে আসনের সংখ্যা মাত্র ৩৫ হাজার। ফলে এক লাখেরও বেশি তরুণ চিকিৎসক এ বছর স্নাতকোত্তরে পড়ার সুযোগ পাবেন না। এর বাইরেও আছেন আরও ২০ হাজার তরুণ চিকিৎসক, যাঁরা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে স্নাতক হয়েছেন কিন্তু ভারতের কোনও মেডিক্যাল কলেজে ঢোকার প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি।

‘‘করোনাযুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে এঁদের সকলকে কেন্দ্রীয় সরকার যদি সামিল করাতে পারেন, তবেই কাজ হবে। না হলে দেখতে হবে মৃত্যুমিছিল আর লাগামছাড়া সংক্রমণ’’, বলেছেন দেবী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement