Sonia Gandhi

বিক্ষুব্ধদের পাল্টা প্রশ্ন রাহুলের, রফার চেষ্টা সনিয়ার

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:২৮
Share:

—ফাইল চিত্র।

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সক্রিয়তা নিয়ে দলের প্রবীণ নেতারা প্রশ্ন তুলেছিলেন। রাহুল গাঁধী আজ পাল্টা প্রশ্ন তুললেন, এই প্রবীণ নেতাদের নিজেদের রাজ্যে কংগ্রেসের কী অবস্থা?

Advertisement

গত অগস্টে ২৩ জন কংগ্রেস নেতা দলের বেহাল দশা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সনিয়া গাঁধীকে চিঠি লিখে,

সব সময়ে সক্রিয় ও দৃশ্যমান নেতৃত্বের দাবি তোলেন। তার পর থেকেই

Advertisement

গাঁধী পরিবারের সঙ্গে এই ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাদের সম্পর্কে বরফ জমেছিল। আজ সনিয়া নিজেই রাহুল-প্রিয়ঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে সেই বরফ গলানোর চেষ্টা করলেন। এ কে অ্যান্টনি, অশোক গহলৌতের মতো গাঁধীদের আস্থাভাজনদের সঙ্গে গুলাম নবি আজাদ, পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ, শশী তারুরদের মতো ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠকে বসলেন।

শীতের শনিবারে, দশ জনপথের লনে টানা পাঁচ ঘণ্টার এই বৈঠককে গাঁধী পরিবার ও বিক্ষুব্ধদের মধ্যে দূরত্ব কমানোর প্রথম চেষ্টা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কিন্তু প্রথম দিনে দূরত্ব কতটা কমল, সে প্রশ্ন রইলই। রাহুল ফের সভাপতির দায়িত্ব নিতে তৈরি কি না, তা নিয়েও ধোঁয়াশা থেকে গেল।

রাহুল বৈঠকে বলেছেন, দল যা দায়িত্ব দেবে তিনি তা পালনে তৈরি। কিন্তু বৈঠকে ১৯ জন নেতার অধিকাংশ যখন দাবি তুলেছেন, রাহুলকে ফের নেতৃত্ব নিতে হবে, তখন রাহুল বলেছেন, এই বিষয়টা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপরেই ছেড়ে দেওয়া হোক। উল্টে তিনি বলেছেন, পদ বড় নয়, দলই বড়। সকলে মিলে কাজ করলে বিজেপির মোকাবিলা করা সম্ভব।

২৩ জন বিক্ষুব্ধ নেতার মধ্যে না-থাকলেও পি চিদম্বরম নেতৃত্বের সঙ্কট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ দিনের বৈঠকে তিনি দাবি তোলেন, কংগ্রেসের রোজকার কাজকর্ম দেখভালের জন্য আবার সংসদীয় বোর্ড ফিরিয়ে আনা হোক। এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদকদের দিয়ে রাজ্যের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণের বদলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিদের আরও ক্ষমতা দেওয়া হোক। মধ্যপ্রদেশের কমল নাথ গাঁধী পরিবারের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ নেতাদের এই দূরত্ব মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। বৈঠকে তিনি বলেন, নবীন বনাম প্রবীণের এই ধারণাটাই মোছা দরকার।

জবাবে রাহুল কমল নাথকে লক্ষ্য করে বলেন, তিনি মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনও ‘আরএসএস অফিসার’-রা সরকার চালাচ্ছিলেন। চিদম্বরমকে লক্ষ্য করে রাহুল বলেন, চিদম্বরমের রাজ্য তামিলনাড়ুতে সংগঠনের নিচু স্তরে কংগ্রেসকে স্রেফ ডিএমকে-র লেজুড়বৃত্তি করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে রাহুল মন্তব্য করেন, প্রবীণদের উপরে তাঁর কোনও ব্যক্তিগত ক্ষোভ নেই। কারণ প্রবীণরা সকলে হয় তাঁর বাবা রাজীব, বা মা সনিয়ার সঙ্গে কাজ করেছেন।

উল্টো দিকে রাহুলকে সভাপতি পদে চাইলেও, বিক্ষুব্ধ নেতারা নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে দাবি তুলেছেন, সকলের সঙ্গে আলোচনা করে দল চালাতে হবে। পৃথ্বীরাজ দাবি তোলেন, নিয়মিত কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকতে হবে। চিদম্বরমও একই কথা বলেন। এ দিন বৈঠকের ঠিক আগেই এআইসিসি-তে ছাত্র সংগঠনের নেত্রী রুচি গুপ্ত সংগঠনে নিষ্ক্রিয়তার দিকে আঙুল তুলে পদত্যাগ করেন।

মাস দুয়েকের মধ্যে কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সভানেত্রীর পদ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে সনিয়া আজ রাহুলের

সঙ্গে বাকিদের দূরত্ব মেটাতে

যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, কংগ্রেস একটা বিরাট পরিবারের মতো। প্রিয়ঙ্কাও বিক্ষুব্ধদের দাবি কার্যত মেনে নিয়েই বলেছেন, দলের নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। স্রেফ সার্কুলার জারি করে সংগঠন চলবে না। নেতাদের মাঠে নামতে হবে। বৈঠকে ‘তু তু ম্যায় ম্যায়’ এড়াতে কে সি বেণুগোপাল বা

রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার মতো ‘টিম রাহুল’-এর মার্কামারা নেতাদের ডাকা হয়নি।

এই সৌহার্দ্যর আবহ ধরে রাখতেই বৈঠক শেষে এআইসিসির তরফে পবন বনসল বলেছেন, ‘‘কেউ রাহুলের বিরোধিতা করেননি। সকলে দলকে মজবুত করার কথাই বলেছেন।’’ পৃথ্বীরাজ বলেন, ‘‘আবার বৈঠক হবে। সকলের কথা শোনা হবে।’’ এই সৌহার্দ্য কি বজায় থাকবে, না কি সভাপতি নির্বাচন ঘিরে ফের গৃহযুদ্ধ শুরু হবে? গহলৌতের সহাস্য জবাব, ‘‘কোনও বিরোধ তো ছিল না। যা দেখা যায়, রাজনীতিতে তা হয় না। যা হয়, তা দেখা যায় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement