সনিয়া গান্ধী এবং মল্লিকার্জুন খড়্গে। ছবি: টুইটার।
রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র পরে কংগ্রেসের অন্দরমহলে প্রশ্ন উঠেছিল, শুধু কি নরেন্দ্র মোদী সরকারের সমালোচনা করেই বিজেপিকে হারানো সম্ভব? বিকল্প নীতি কোথায়!
আজ রায়পুরের প্লেনারি অধিবেশনে কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্ব সেই বিকল্প নীতিরই সন্ধান দিলেন। রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র প্রধান মন্ত্র, বিজেপি-আরএসএসের বিদ্বেষ-বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে সম্প্রীতির বার্তা। আজ কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কেন্দ্রে ফের ক্ষমতায় এলে কংগ্রেস বিদ্বেষমূলক অপরাধ বা ‘হেট ক্রাইম’ রুখতে, শাস্তির ব্যবস্থা করতে নতুন আইন আনবে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, আপাতত কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যগুলিতে এই আইন আনা হবে। ধর্ম, জাতি, ভাষার ভিত্তিতে বৈষম্য রুখতে বৈষম্য বিরোধী আইন তৈরি হবে।
সনিয়া গান্ধী আজ বলেছেন, ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ কংগ্রেসের সঙ্গে মানুষের কথাবার্তার জনসংযোগ কর্মসূচির ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনেছে। প্লেনারি অধিবেশন থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, এই জনসংযোগ কর্মসূচির মাধ্যমেই ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের জন্য ‘ভিশন ডকুমেন্ট’ তৈরি হবে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, এর ভিত্তিতেই লোকসভা ভোটের ইস্তাহার, বিরোধী জোটের অভিন্ন কর্মসূচি তৈরি হবে। তাতে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র অন্য দুই মন্ত্র, বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় কংগ্রেসের বিকল্প নীতি তুলে ধরা হবে।
মোদী জমানায় বারবার কংগ্রেস বা অন্য দলের বিধায়কদের ভাঙিয়ে বিজেপি কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে কংগ্রেসের সরকার ফেলে দিয়েছে বা কম বিধায়ক নিয়েও গোয়া-মণিপুরে সরকার গড়েছে। রাজীব গান্ধীর আমলে তৈরি দলবিরোধী আইন দিয়েও তা ঠেকানো যায়নি। কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে দল ভাঙানো ঠেকাতে সংবিধান সংশোধন করা হবে। মোদী জমানায় নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক চাঁদার সিংহভাগই বিজেপির ঝুলিতে যাচ্ছে। কংগ্রেস এ বার সিপিএমের সুরে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ক্ষমতায় এলে জাতীয় নির্বাচনী তহবিল তৈরি করবে। তাতেই সকলে চাঁদা জমা করবে। সেই অর্থ নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ভোটের সময় নির্বাচনী খরচ বাবদ ভাগ করে দেওয়া হবে।
ইভিএম নিয়ে সংশয় দূর করার প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনের সাড়া না মিললে অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আদালতের দরজায় কড়া নাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। বিজেপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে করায়ত্ত করার অভিযোগ তুলে কংগ্রেস দাবি তুলেছে, রাজ্যপালরা নিজের পদের অপব্যবহার করলে তাঁদের জনগণের সামনে দায়বদ্ধ করতে হবে। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করা হবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে, এমন যাবতীয় আইন বাতিল করা হবে। বিজেপির প্রবীণ নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ কংগ্রেসের ঘোষণার জবাবে বলেছেন, “মানুষের ভোট পাচ্ছে না বলে কংগ্রেস মোদী সরকার, বিজেপির বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলছে।”
ইউপিএ সরকারের আমলে রোজগার, তথ্য, খাদ্যের অধিকার আইন চালু হয়েছিল। কংগ্রেস আজ ঘোষণা করেছে, ফের ক্ষমতায় এলে কংগ্রেস স্বাস্থ্য পরিষেবার অধিকার আইন আনবে। তাতে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যপরীক্ষা, ওপিডি, ওষুধ, হাসপাতাল পরিষেবার ব্যবস্থা হবে। তার জন্য স্বাস্থ্য খাতে জিডিপি-র ৩ শতাংশ ব্যয় করা হবে। রাজ্যের পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল থেকে অফিসার পদে ৩৩ শতাংশ পদ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
প্লেনারি অধিবেশনের অর্থনৈতিক প্রস্তাবে কংগ্রেস ফের আদানি গোষ্ঠীর মতো প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতির সংস্থার হাতে সরকারি সম্পদ তুলে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। কিন্তু একই সঙ্গে বিকল্প নীতি হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন মাপকাঠি তৈরির কথা বলেছে। যাতে শুধু জিডিপি-র বৃদ্ধির হার না গুণে জীবনযাত্রার মান, ভবিষ্যতের আশার মতো মাপকাঠিও থাকবে।
রাজনৈতিক প্রস্তাবে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের তকমা ফেরানো ও লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে আনার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু ৩৭০ অনুচ্ছেদ ফেরানোর দাবি নিয়ে কংগ্রেস সুকৌশলে নীরব থেকেছে। ইউপিএ সরকারের সময় অন্ধ্রপ্রদেশের বিভাজন হয়েছিল। কিন্তু অন্ধ্র, তেলঙ্গানা দুই রাজ্যেই কংগ্রেস জনসমর্থন হারিয়েছে। ফের ক্ষমতায় এলে কংগ্রেস সেই অন্ধ্রকে বিশেষ শ্রেণিভুক্ত রাজ্যের মর্যাদা দেবে বলে জানিয়েছে।