একচালার প্রতিমা। ডাকের সাজ। গরুর গাড়িতে বিসর্জন। ধুতি পাঞ্জাবিতে সেজে ধুনুচি নাচ। ধুনোর গন্ধ। সব মিলিয়ে এক সাবেকি নস্টালজিয়া।
দিল্লি ও তার লাগোয়া এলাকায় যতই বারোয়ারি দুর্গোৎসবের সংখ্যা বাড়ুক, তারই মধ্যে একশো বছর পার করা রাজধানীর সাবেকি কিছু পুজো আজও সমান উজ্জ্বল তার পুরনো ছবিটিকে ধরে রেখে। যে পুজোগুলি রাজধানীর সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের দলিলও বটে।
স্বাধীনতার ৩৭ বছর আগে শুরু হওয়া উত্তর দিল্লির কাশ্মীরি গেটের পুজোটি যেমন। ‘দিল্লি দুর্গাপুজো চ্যারিটেবল অ্যান্ড কালচারাল কমিটি’ যখন এই পুজো শুরু করে, তখন ইংরেজদের দোর্দণ্ড শাসন। কর্মকর্তাদের দাবি, এটিই দিল্লির প্রাচীনতম পুজো।
দীর্ঘদিন ধরে এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত, সমিতির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সমরেন্দ্র বসু বলছেন, ‘‘দিল্লিতে প্রথম বারোয়ারি দুর্গা পুজোটি হয় ১৯১০ সালে নই সড়কের কাছে রোশনপুর কালীমন্দিরে। এর পরে সমিতির এই পুজোর করার জন্য জায়গা মেলে ফতেহপুর মসজিদের কাছে এক ধর্মশালায়। এই পুজোটিই আবার ১৯৪৮ সালে কাশ্মীরি গেটে দিল্লি পলিটেকনিক কলেজে স্থানান্তরিত হয়।’’ এখানেই শেষ নয়. এই দীর্ঘজীবী দুর্গোৎসবের মণ্ডপ ফের চলে যায় সিভিল লাইনসের বেঙ্গলি সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে।
তবে কাশ্মীরি গেটের পুজোকেই দিল্লির প্রথম বারোয়ারি উৎসব বলে এখানকার সংগঠকেরা দাবি করলেও, বয়স নিয়ে এই প্রতিযোগিতা কিন্তু প্রত্যেক বার পুজোর আড্ডায় একটি মুখরোচক আইটেম।
কারণ, কাশ্মীরি গেটের ঘাড়ের কাছেই যে নিঃশ্বাস ফেলছে তিমারপুরের পুজো। যার সংগঠকদের পাল্টা দাবি, এই পুজোর পত্তন ১৯০৯ সালে, অর্থাৎ কাশ্মীরি গেটের পুজোর এক বছর আগেই। তিমারপুর পুজো কমিটির সভাপতি সুখাংশু চট্টোপাধ্যায় ইতিহাসের খেই ধরিয়ে দিলেন, ‘‘অনেকে মনে করেন দিল্লিতে প্রথম দুর্গাপুজোটি হয়েছিল ৩০০ বছর আগে। তৎকালীন মোঘল দরবারে বাণিজ্যের কারণে এসেছিলেন কিছু বাঙালি বণিক। সালটা ১৭১৪। কাজের টানে বঙ্গভূমে আর ফিরে যাওয়া হয়নি তাঁদের। অগত্যা মোঘল সম্রাটের দ্বারস্থ হয়ে দুর্গাপুজোর অনুমতি আদায় করেন তাঁরা।’’ সেই পুজো ঠিক কোথায় হয়েছিল তার প্রামাণ্য নথি অবশ্য পাওয়া যায় না।
১৯৩৫-এ শুরু হওয়া নিউ দিল্লি কালীবাড়ির দুর্গাপুজো এখনও শহরের অন্যতম জনপ্রিয় পুজো। ইংরেজ আমলে কলকাতা থেকে আসা বাঙালি সরকারি বাবুরা এর গোড়াপত্তন করেন। এডওয়ার্ড স্কোয়ার, বেয়ার্ড স্কোয়ার, সিকান্দ্রা প্লেস ঘুরে এটি পাকাপাকি ভাবে নিউ দিল্লি কালিবাড়ি মণ্ডপে চলে আসে। এই পুজার সংগঠকদের দাবি, কোনও শিল্পপ্রদর্শনী বা বাহ্যিক আড়ম্বরের উপরে জোর দেওয়া হয় না এখানে। বরং পূজার মন্ত্র, আচারনিষ্ঠতা এবং শুদ্ধতাই এই পুজোর প্রাণ। মানুষ টানার মূল ‘ইউএসপি’।