অস্বস্তির কাঁটা গেঁথেই ফেরত ভারতীয় জওয়ান

ঘরের ছেলে ঘরে ফিরলেও গুনতে হতে পারে তাঁর ভুলের মাসুল।ভারতীয় সেনা জওয়ান চান্দু চহ্বাণকে আজ ফিরিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে সার্জিকাল স্ট্রাইক চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২০
Share:

চান্দু চহ্বাণকে ফেরাল পাকিস্তান। শনিবার ওয়াঘায়। ছবি: পিটিআই।

ঘরের ছেলে ঘরে ফিরলেও গুনতে হতে পারে তাঁর ভুলের মাসুল।

Advertisement

ভারতীয় সেনা জওয়ান চান্দু চহ্বাণকে আজ ফিরিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে সার্জিকাল স্ট্রাইক চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা। সে দিনই পাক সেনার হাতে ধরা পড়েন চান্দু। ভারতীয় সেনা দাবি করেছিল, চান্দু আদৌ সার্জিকাল স্ট্রাইক-এ অংশ নেননি। মেন্ধার সেক্টরে নিযুক্ত ওই জওয়ান ভুল করে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তানের এলাকায় চলে গিয়েছিলেন। আজ ওয়াঘা-সীমান্তে চান্দুকে ভারতের হাতে তুলে দিয়ে পাকিস্তান দাবি করেছে, ঊর্ধ্বতন অফিসারদের দুর্ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের ইচ্ছেতেই তাদের দেশে চলে গিয়েছিলেন চান্দু।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এমনিতেই বেশ অস্বস্তিতে রয়েছেন সেনাবাহিনী, বিএসএফ বা এসএসবি-র মতো সশস্ত্র বাহিনীগুলির কর্তারা। সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণরেখায় মোতায়েন একাধিক জওয়ান সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন ঊর্ধ্বতন অফিসারদের দুর্ব্যবহার ও দুর্নীতি নিয়ে। খাবারের মান ও পরিমাণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। পরিস্থিতি সামলাতে খোদ সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়তকে আসরে নামতে হয়েছে। বলতে হয়েছে, জওয়ানদের ক্ষোভ থাকলে যেন তাঁকেই সরাসরি জানান। এমনকী, সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুললে শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিতে হয়েছে তাঁকে। শুরু করতে হয়েছে তদন্তও।

Advertisement

সেই ক্ষতেই আজ নুন ছড়াল পাকিস্তান! পাক সেনার মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ ঘফুর এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, বন্ধুত্বের মনোভাব থেকেই চান্দুকে ভারতে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ওই জওয়ান নিজের উর্ধ্বতন সেনা অফিসারদের উপরে ক্ষুব্ধ হয়ে পাকিস্তানে চলে এসেছিলেন। পাক সেনার দাবি, ভারতীয় সেনার কম্যান্ডাররা চান্দুর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। সেই ক্ষোভেই নিজের চৌকি ছেড়ে তাদের কাছে এসে আত্মসমর্পণ করেন চান্দু। ঘফুরের দাবি, তাঁরাই চান্দুকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে দেশে ফেরত যেতে রাজি করিয়েছেন।

ভারতীয় সেনা সূত্রের খবর, দেশে ফিরলেও শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে ওই জওয়ানকে। তাঁর জন্য পাকিস্তানের কাছে গোটা বাহিনীর মুখ পুড়েছে। চান্দু সত্যিই ভুল করেছিলেন, নাকি অন্য কোনও কারণ ছিল, তা খতিয়ে দেখা হবে। ভুল হয়ে থাকলেও নিয়ন্ত্রণরেখা চিনতে না পারার দায় চান্দু এড়াতে পারেন না।

সেনার একটি সূত্রের বক্তব্য, পাক সেনার দাবি প ভুল না-ও হতে পারে। কারণ ৩৭ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসে নিযুক্ত ২২ বছরের ওই সেপাই ঊর্ধ্বতন অফিসারদের উপরে ক্ষুব্ধ ছিলেন বলে রিপোর্ট মিলেছে। ২৯ সেপ্টেম্বরও তাঁর সঙ্গে অফিসারদের তর্ক হয়। তার পর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েই নিয়ন্ত্রণরেখার দিকে হাঁটা শুরু করেন চান্দু। সেনা সূত্রের বক্তব্য, ঘটনাটি ঘটে দিনে। তাই নিয়ন্ত্রণরেখা ভুল করে পেরিয়ে যাওয়াটা সম্ভব নয়। সেনার দাবি, নিয়ন্ত্রণরেখায় জওয়ান বা নাগরিকরা প্রায়ই এমন ভুল করেন। প্রচলিত ব্যবস্থা অনুযায়ী তাঁদের ফেরানো হয়। চান্দু পাক এলাকায় চলে যাওয়ার পরে চার মাসে দু’দেশের ডিজিএমও-র মধ্যে ১৫ বার এ বিষয়ে কথা হয়েছে। চান্দুর খবর শুনে তাঁর ঠাকুমা হৃদ্‌রোগে মারা যান। মহারাষ্ট্রের ধুলের বাসিন্দা চান্দুর বাড়ি প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ ভামরের লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। ভামরেও উদ্যোগী হন। সপ্তাহ খানেক আগে পাকিস্তান জানায়, চান্দুর বিষয়ে তদন্ত শেষ। খুব শীঘ্রই তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

সেই কথা রাখলেও সঙ্গে অস্বস্তির কিছু কাঁটাও ফেরত দিল পাকিস্তান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement