আমজনতার হোয়াটসঅ্যাপ, ট্যুইটারে নজর রাখতে গিয়ে ‘নজরদার রাষ্ট্র’ তৈরির অভিযোগের মুখে পড়ল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
সুপ্রিম কোর্টের এই ক্ষোভের কারণ— ফেসবুক, ট্যুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ-এ নজর রাখতে তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের ‘সোশ্যাল মিডিয়া কমিউনিকেশন হাব’ তৈরির পরিকল্পনা। এ কাজে সফটওয়্যার ব্যবস্থা তৈরির জন্য এপ্রিল মাসেই প্রস্তাব আহ্বান করেছে তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক।
কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক মহুয়া মৈত্র। তাঁর যুক্তি, সুপ্রিম কোর্ট ব্যক্তি পরিসরের অধিকারকে সংবিধানের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। মোদী সরকার সেই অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বেঞ্চে আজ মহুয়ার হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী অভিষেক মনুসিঙ্ঘভি।
বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘যদি সব ট্যুইট, হোয়াটসঅ্যাপ দেখা হয়, তা হলে আমরা নজরদার রাষ্ট্র তৈরির দিকেই এগোচ্ছি!’’ এ বিষয়ে কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিস জারি করেছে কোর্ট।
শীর্ষ আদালতের প্রশ্নের মুখে ফের অস্বস্তিতে পড়েছে মোদী সরকার। স্মৃতি ইরানি তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী থাকাকালীন ভুয়ো খবর চিহ্নিত করে, তার জন্য সাংবাদিকদের শাস্তি দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। প্রবল সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রী স্মৃতির সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেন। তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক থেকে স্মৃতিকে সরিয়েও দেওয়া হয়। তার আগেই অবশ্য তিনি ‘সোশ্যাল মিডিয়া কমিউনিকেশন হাব’ তৈরির পরিকল্পনা করে ফেলেছিলেন। তা নিয়েই এ বার প্রশ্ন উঠেছে।
তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের পরিকল্পনা ঠিক কী?
এপ্রিল মাসের সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, কেন্দ্র এমন একটি প্রযুক্তি ব্যবস্থা তৈরি করতে চায়, যা ডিজিটাল দুনিয়ায় ৩৬০ ডিগ্রি নজরদারি চালাবে। ট্যুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে কী নিয়ে আলোচনা চলছে সফটওয়্যারের মাধ্যমে তার তথ্য জোগাড় করবে। এমনকী ই-মেল থেকেও তথ্য জোগাড় করা হবে। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট ফেসবুক বা ট্যুইটার অ্যাকাউন্টের উপর নজরদারিও চলবে। হাব-এর জোগাড় করা তথ্য যাবে ‘নিউ মিডিয়া কমান্ড রুম’-এ। সরকারের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’-দের ওপরও নজরদারি করা হবে।
মহুয়া মৈত্রর পিটিশনের যুক্তি— ব্যক্তি পরিসরের অধিকারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট বলেছে, যদি দেশের স্বার্থে কারও ব্যক্তিগত তথ্য জোগাড়ের প্রয়োজনও সরকারের হয়, তার জন্য আগে সেই তথ্যর সুরক্ষার বন্দোবস্ত করতে হবে। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কোনও আইন তৈরি করেনি। অথচ ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ চালিয়ে যাচ্ছে।
সিঙ্ঘভি জানান, সফটওয়্যার তৈরির যে দরপত্র চাওয়া হয়েছে, তা ২০ অগস্ট খোলা হবে। বিচারপতিরা জানান, তার আগেই ৩ অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। শুনানির পরে মহুয়া বলেন, ‘‘লড়াই সবে শুরু হল।’’