অগ্নিবীর হতে চায় আগরার শের আলি। (ডান দিকে)
পথে ভিক্ষা করে, কাগজ কুড়িয়েই সংসার চলে তাদের। মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে ঘিঞ্জি বস্তির অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের এক চিলতে ঘর। আর সেই ঘর থেকেই অগ্নিবীর হওয়ার স্বপ্ন দেখছে শের আলি।
বয়স সতেরোর এই কিশোর তার বস্তির ৪০টি পরিবারের ‘রোল মডেল’। আলি যে পরিবেশে বড় হয়েছে সেখানে সকলেই কাগজ কুড়িয়ে তা বিক্রি করে সংসার চালান। পড়াশোনার আঙিনা থেকে সহস্র ক্রোশ দূরে থাকা সেই পরিবারগুলি থেকে বোর্ডের পরীক্ষায় ভাল করে উঠে আসা শের আলি এখন গোটা মহল্লার ‘শের’।
উত্তরপ্রদেশের আগরার বস্তিতে ৮x৮ ফুট ঘরে আট ভাইবোনের সংসারে বেড়ে উঠেছে আলি। ঘরে বিদ্যুৎ নেই। কোনও দিন খাবার জোটে, আবার কোনও দিন না খেয়েই কাটিয়ে দিতে হয়। আলির মধ্যে কিছু গুণ এবং পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ চোখে পড়েছিল এক সমাজকর্মী নরেশ পারসের। তিনিই আলিকে ওই পরিবেশ থেকে বার করে স্কুলে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন।
আলি এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, যে বস্তিতে সে থাকে, সেখানে প্রতিটি পরিবারই কাগজ কুড়ানির কাজ করে। এমনকি ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরও সেই কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়। ফলে তাদের কাছে পড়াশোনার চিন্তাভাবনা একটা অলীক স্বপ্নের মতো। কিন্তু সেই বেড়াজাল ছিঁড়ে পারসের হাত ধরে পড়াশোনার জগতে ঢুকে পড়ে আলি। এ বছরে উত্তরপ্রদেশের দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা ৬৩ শতাংশ নিয়ে পাশ করেছে আলি। ইংরাজিতে ১০০-র মধ্যে পেয়েছে ৮০।
আলির বাবা রঙ্গি আলি বলেন, “অনেক কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করেছে আমার ছেলে। আমাদের বস্তির সব বাচ্চার কাছে আলিই এখন অনুপ্রেরণা।” আলির মা শাহবিন বলেন, “খাওয়া জোটেনি কোনও কোনও দিন, কিন্তু আলি পড়াশোনা এক দিনের জন্য বাদ দেয়নি। কোনও কোনও দিন রাতে শুধু জল খেয়েই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে। ওর চোখে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন।”
শুধু পড়াশোনাই নয়, আলি অ্যাথলিটেও জেলা এবং রাজ্যস্তর থেকে অনেক পদত জিতেছে। আলি বলে, “পরীক্ষায় এই ফল আমার আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়েছে। আমি সেনায় যোগ দিতে চাই। অগ্নিবীর হয়ে দেশের সেবা করতে চাই।”