নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা সত্ত্বেও কী ভাবে এই হামলার চেষ্টা? হতচকিত সিপিএম। ছবি: পিটিআই।
আক্রান্ত সীতারাম ইয়েচুরি। নয়াদিল্লিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এ কে গোপালন ভবনের মধ্যেই হিন্দু সেনা নামে একটি সংগঠনের হাতে হেনস্থার সম্মুখীন হলেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক। সাংবাদিক সম্মেলনে ঢোকার মুখে ইয়েচুরি হেনস্থার মুখে পড়েন বলে জানা গিয়েছে। ইয়েচুরিকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করার চেষ্টাও হয়েছিল বলে সিপিএমের অভিযোগ। সিপিএম কার্যালয়ের সামনের নিরাপত্তা সম্প্রতি অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া সত্ত্বেও কী ভাবে কার্যালয়ের ভিতরে আক্রমণের মুখে পড়লেন ইয়েচুরি, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই। দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ।
ইয়েচুরির উপর হামলার চেষ্টার পর। বুধবার এ কে গোপালন ভবনে। ছবি: পিটিআই।
এ দিন এ কে গোপালন ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছিলেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। দোতলায় সাংবাদিক সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। সেখানেই অপেক্ষায় ছিলেন দু’জন। ইয়েচুরি সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য দোতলায় পৌঁছতেই হঠাৎ তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান শুরু হয়। সিপিএম এবং ইয়েচুরির নামে ‘মুর্দাবাদ’ ধ্বনি ওঠে। সিপিএম-কে পাকিস্তানে গিয়ে রাজনীতি করার পরামর্শও দেওয়া হয় স্লোগানে। এ কে গোপালন ভবন সূত্রের খবর, দুই বিক্ষোভকারী সঙ্ঘ পরিবারের নামেও জয়ধ্বনি দিচ্ছিলেন। তাঁরা হিন্দু সেনা নামে একটি সংগঠনের কর্মী বলে পিটিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জন ইয়েচুরিকে মারার চেষ্টা করেন বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক সিপিএম কর্মীর দাবি। তবে শেষ পর্যন্ত সিপিএম সাধারণ সম্পাদককে শারীরিক ভাবে হেনস্থা করতে পারেননি বিক্ষোভকারীরা। সিপিএম কর্মীরা তার আগেই ধরে ফেলেন ওই দুই হিন্দু সেনা কর্মীকে। পরে তাঁদের তুলে দেওয়া হয় মন্দির মার্গ থানার পুলিশের হাতে।
দিল্লিতে ইয়েচুরির উপর হামলার চেষ্টার প্রতিবাদে কলকাতায় বিক্ষোভ মিছিল সিপিএমের। —নিজস্ব চিত্র।
গোমাংস এবং গোহত্যায় বিধিনিষেধ আরোপের যে চেষ্টা কেন্দ্রীয় সরকার করছে, বামেরা তার তীব্র বিরোধিতা করেছে। সিপিএমের এই অবস্থানের কারণে দলের নেতৃত্বকে যে কট্টরবাদীদের হামলার মুখে পড়তে হতে পারে, সে আশঙ্কা ছিলই। তাই এ কে গোপালন ভবনের সামনে সম্প্রতি কঠোর নিরপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে প্রশাসনের নির্দেশে। পাহারায় রয়েছেন সশস্ত্র রক্ষীরা। সাধারণত সিপিএম অফিসের সামনে এত নিরাপত্তা থাকে না। এত কিছু সত্ত্বেও এ কে গোপালন ভবনে ঢুকে দুই বিক্ষোভকারী ইয়েচুরির দিকে তেড়ে গেলেন কী ভাবে? প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই। সিপিএম-এর তরফে জানানো হয়েছে, সাংবাদিক সম্মেলন ছিল বলে এ দিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি এ কে গোপালন ভবনে ঢুকছিলেন। তাঁদের ভিড়ে মিশেই দুই বিক্ষোভকারী ঢুকে পড়েন। তাই তাঁদের চেনা যায়নি। তাঁরা দোতলায় অপেক্ষা করছিলেন। ইয়েচুরি উপরের তলা থেকে নীচে নামতেই বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: সঙ্ঘ-নেতার মন্তব্যে বিতর্ক, ক্ষুব্ধ জামিয়া
সিপিএম সাধারণ সম্পাদক অবশ্য এতে বিচলিত নন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার গায়ে হাত পড়েনি। গায়ে হাত পড়লে ওঁরা বুঝতে পারতেন ফলটা কেমন হয়।’’ কিন্তু এই ঘটনার পর কী তিনি অতিরিক্ত নিরাপত্তা চাইবেন? ইয়েচুরির মন্তব্য, ‘‘নিরাপত্তার জন্য আমরা নিজেরাই যথেষ্ট।’’