বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার স্বপন দে হত্যায় জড়িত সন্দেহে ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে মোগলসরাই পুলিশ। গত কাল রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ উত্তরপ্রদেশের মোগলসরাই স্টেশনের ডাউন ইয়ার্ড থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। চান্দৌলি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবেন্দ্রনাথ দুবে বলেন, ‘‘ওয়াগন সারানোর কাজ নিয়ে গোলমাল হয়েছিল। সম্ভবত তার জেরেই হত্যা।’’ গত কাল রাতে ধৃতেরা এলাকায় গুলি চালিয়ে ফের ভয় দেখাতে আসবে বলে গোপন সূত্রে খবর পায় পুলিশ। ধৃতেরা সেখানে হাজির হলে পুলিশ দেখে গুলি ছুড়তে শুরু করে। সংঘর্ষের পরে ছ’জনকে ধরা গেলেও একজন পালিয়ে যায়। ধৃতদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তল-সহ চারটি আগ্নেয়াস্ত্র, ১০ রাউন্ড গুলি, তিনটি মোটরবাইক, দু’টি মোবাইল ফোন ও সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
ধৃতেরা সকলেই ‘গাজিপুর গ্যাং’-এর সদস্য। ধৃতদের নাম রজত সিংহ পটেল ওরফে আন্না, রঞ্জিত সিংহ ওরফে গোলু, কিশলয় কান্ত সিংহ, অভিষেক পাণ্ডে, সচিন যাদব এবং রাজবাহাদুর যাদব। রঞ্জিত, কিশলয় ও অভিষেক গাজিপুরের বাসিন্দা। পুলিশের দাবি এরাই হত্যায় জড়িত। সচিন ও রাজবাহাদুর স্থানীয় বাসিন্দা। এই দু’জন এলাকা ‘রেকি’ করা ও ঘটনার পরে পুলিশের খোঁজখবর, অবস্থান দুষ্কৃতীদের জানিয়েছিল।
মোগলসরাই পুলিশের দাবি, বিহারের কৈমুর জেলার বাসিন্দা রাকেশ সিংহ ওরফে ডাব্বু ইঞ্জিনিয়ার খুনের প্রধান ষড়যন্ত্রী। সে মোগলসরাইয়েই থেকে ছাঁট লোহার কারবার করে। ‘টুয়াম্যান ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড কোম্পানি’-র কর্তা অলোক বোহরার কাছে সে ওয়াগন সারানোর কাজ চেয়ে পায়নি। রাকেশ জানতে পারে স্বপনবাবুর কথাতেই ওই সংস্থা তাকে কাজ দেয়নি। গত ১২ মে স্বপনবাবুর সঙ্গে গোলমাল হয় রাকেশের। এর পরে রাকেশই বারাণসী গিয়ে আন্না, গোলু, কিশলয় ও অভিষেকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে। স্বপনবাবুকে সরিয়ে দিতে পারলেই ওয়াগন সারানোর কাজ পাবে বলে আশা ছিল তার। এর পরেই ১৯ মে ইয়ার্ডে ঢুকে স্বপনকে খুন করা হয়।
তবে স্বপনবাবুর পরিবারের লোকজন পুলিশের তদন্তের সঙ্গে সহমত নয়। পুলিশের একটি অংশও তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাঁদের দাবি, পুলিশ অন্য কাউকে বাঁচাতে চাইছে। স্ত্রী নন্দিতাদেবী জানিয়েছেন, স্বপনবাবু কাজ দেওয়ার দায়িত্বেই ছিলেন না। কাজ দেওয়া হত কলকাতার সদর দফতর থেকে। কাজ দেওয়ার পরে স্বপনবাবু দেখভালের দায়িত্ব পেতেন। তা হলে স্বপনবাবুকে কেন মারা হবে? কাজের মান নিয়ে স্বপনবাবুর সঙ্গে এক ঠিকাদার এবং টুয়াম্যান ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক প্রভাবশালী কর্মীর বিরোধ ছিল। তাঁদের চাপে কাজ ছাড়তে চেয়েছিলেন স্বপনবাবু। এপ্রিলে সে কথা সদর দফতরে জানান তিনি। পুলিশ পরিবারের এই দাবি নিয়ে কিছু বলতে চায়নি। অতিরিক্ত এসপি জানিয়েছেন তদন্ত চলবে।