সীতারাম ইয়েচুরি
কেন্দ্রের এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ঘরোয়া আলোচনায় বাম নেতাদের প্রশ্ন করেছেন, দেশ চালিয়েও বিজেপি তাদের সভাপতিকে সংসদে পাঠাচ্ছে। আর তাঁরা দলের মুখকে সংসদ থেকে তুলে নিচ্ছেন?
এই প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই সিপিএমে। রয়েছে শুধু জটিলতা এবং ইগোর লড়াই! যে জটিলতা কাটাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন মানিক সরকারও। তবে ফল মেলেনি।
দেশের রাজনীতিতে বিজেপি-র বিপদ তাঁরা বুঝছেন। তাই সংসদের রণক্ষেত্রে সেনাপতি হারাতে চান না। কংগ্রেসকে নিয়ে ছুৎমার্গের বাইরে বেরিয়ে তাঁদের রাজ্য থেকেই সীতারাম ইয়েচুরিকে রাজ্যসভায় পাঠাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন মানিকবাবুরা।
ছোট্ট রাজ্য ত্রিপুরায় লোকসভার আসন দু’টি। আর রাজ্যসভায় মাত্র একটি। বাংলা থেকে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে ইয়েচুরিকে রাজ্যসভায় আবার পাঠাতে প্রকাশ কারাট এবং দলের কেরল শিবির ঘোর আপত্তি তুলছে দেখে বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছিল ত্রিপুরা। তাদের বক্তব্য ছিল, ওই রাজ্য থেকে দলের রাজ্যসভার সাংসদ ঝর্না দাস বৈদ্য ইস্তফা দিয়ে দেবেন। সেই জায়গায় উপনির্বাচন করে ইয়েচুরি চলে যেতে পারবেন রাজ্যসভায়। তার জন্য কংগ্রেসের সমর্থন নেওয়ার হ্যাপা পোহাতে হবে না! কিন্তু স্বয়ং ইয়েচুরি এই প্রস্তাবে রাজি হননি। দলীয় সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় কমিটির বিবেচনাতেও বিষয়টি আনা হয়েছিল। তারাও জানিয়ে দেয়, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক বরং দলের কাজেই মন দিন। সংসদে নয়।
দিল্লিতে সদ্যসমাপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের ফাঁকে এ রাজ্য থেকে পলিটব্যুরোর সদস্য বিমান বসু আলাদা করে আলোচনায় বসেছিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিকবাবুর সঙ্গে। তার পরে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ত্রিপুরার এক নেতা রাজ্যসভা প্রসঙ্গ তুলে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইয়েচুরির মতো গ্রহণযোগ্য ও সুবক্তা নেতাকে সংসদে প্রয়োজন। তার জন্য দরকারে ত্রিপুরা থেকে রাজ্যসভার সাংসদ পদত্যাগ করবেন। তখন আর কংগ্রেসের সমর্থন নেওয়া, পার্টি লাইন ভাঙা— এ সব প্রশ্ন উঠবে না। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘যে সব রাজ্যে দলটা সংসদীয় গণতন্ত্রে ভাল ভাবে আছে, বাস্তব পরিস্থি্তি বুঝতে পারছে, তারাই ইয়েচুরিকে রাজ্যসভায় ফের পাঠানোয় কোনও আপত্তি দেখছে না।’’ ত্রিপুরা সিপিএমের এক নেতারও বক্তব্য, ‘‘আমাদের দিক থেকে যতটা করা যেত, চেষ্টা করেছি। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’’
ত্রিপুরার প্রস্তাবে অবশ্য ইয়েচুরিও সায় দেননি। তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের যুক্তি, ওই প্রস্তাব মেনে নিলে ইয়েচুরি নিজেই সংসদে ফেরার জন্য লালায়িত, এই প্রচার দলের মধ্যে আরও জোরদার হতো! তার চেয়ে এই প্রস্তাব দলের মধ্যে নথিভুক্ত হয়ে থাকায় বোঝানো গেল যে, সংসদে ইয়েচুরিকে শুধু তিনি নিজে বা বাংলার নেতারাই চাইছেন না! আনন্দবাজারের প্রশ্নের জবাবে ইয়েচুরি বলছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় কমিটির মতই চূড়ান্ত। দল মনে করছে, সাধারণ সম্পাদকের সংসদে থাকার দরকার নেই। দু’বারের বেশি রাজ্যসভায় না যাওয়ার রীতিও ভাঙার দরকার নেই। তা হলে আর এ রাজ্যে সে রাজ্যে আসন খুঁজে কী হবে?’’