সংসদ ভবন। ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ-র ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর দাবি একপ্রকার উড়িয়েই দিলেন মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার ও পি রাওয়াত। জানিয়ে দিলেন, দেশের সর্বত্র একই সঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
নির্বাচন কমিশনের যুক্তি, দেশের সবক’টি রাজ্যের বিধানসভার সঙ্গে লোকসভা ভোট একইসঙ্গে করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি সংস্থান ভারতীয় সংবিধানে নেই। কারণ, সে ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধানসভার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরে বা আগে ভোট করতে হবে। ভারতীয় সংবিধানে সে রকম কোনও বিধি নেই। পাশাপাশি, সব ক’টি রাজ্যের বিধানসভার সঙ্গে লোকসভা ভোট করার পরিকাঠামোও একটি বড় সমস্যা বলে জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও পি রাওয়াত। যে বিপুল সংখ্যক ইভিএম ও ভিভিপ্যাট ( ভোট ভেরিফায়েবল পেপার ট্রেল মেশিনস) দরকার, তা নেই বলে জানিয়েছে কমিশন। একসঙ্গে নির্বাচন করতে হলে ২৪ লক্ষ ইভিএম দরকার। আর লোকসভা নির্বাচনের জন্য কমিশন ১২ লক্ষ এভিএমের ব্যবস্থা করতে পারে। একসঙ্গে ভোট করতে গেলে আরও ১২ লক্ষ ইভিএম প্রয়োজন হবে। আইন কমিশনকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এই অতিরিক্তি ইভিএম মেশিন কিনতে লাগবে চার হাজার পাঁচশো কোটি টাকা।
দেশের সর্বত্র একইসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করে সোমবারই আইন কমিশনকে আট পাতার চিঠি দেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। আগামী বারোটি বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে লোকসভা নির্বাচন জুড়ে দেওয়ার কথা জানান তিনি। দেশ জুড়ে সারা বছর কোথাও না কোথাও নির্বাচন হচ্ছে, এই পরিস্থিতি বদলানো দরকার বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ‘এক দেশ, এক ভোট নীতি’র পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, যে চার রাজ্যে পরিস্থিতি বিজেপির পক্ষে অনুকূল নয়, সেখানে তারা আরও কিছুটা সময় নিতে চাইছে। একসঙ্গে ভোট হলে রাজ্যগুলিতে ভোটব্যাঙ্কের হাল কিছুটা হলেও ফেরানোর সম্ভাবনা থাকবে।
বিষয়টি নিয়ে আইন কমিশন এই মাসের শেষেই তার সিদ্ধান্ত সরকারকে জানিয়ে দেবে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই কথা বলেছে আইন কমিশন। বিজেপি ছাড়া এক দেশ, এক ভোটের পক্ষে সওয়াল করেছে বিজু জনতা দল, এআইএডিএমকে, শিরোমণি অকালি দল। রজনীকান্তও সওয়াল করেছেন এক ভোটের পক্ষেই। একসঙ্গে নির্বাচন করতে হলে সংবিধান সংশোধনের পাশাপাশি আর কী করা দরকার, সেই প্রয়োজনীয় রোডম্যাপও সরকারকে দেবে আইন কমিশন।
আরও পড়ুন: আফস্পা নিয়ে শীর্ষ আদালতে ৩০০ জন সেনা কর্মী
যদিও নীতিগত ভাবে এক দেশ, এক ভোটের বিপক্ষেই দাঁড়াচ্ছে কংগ্রেস। তাঁদের যুক্তি, দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হবে একসঙ্গে ভোট হলে। একই মত তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিআইয়েরও।
আরও পড়ুন: তিন রাজ্যের বিধানসভা ভোটে বিজেপির হারই দেখছে সমীক্ষা
যদিও রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ে ভাল ফল হতে পারে, এই ইঙ্গিত পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সুর চড়িয়েছে কংগ্রেস। এই তিনটি রাজ্য এবং মিজোরাম বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে এই বছরই। কংগ্রেসের দাবি, সে ক্ষেত্রে লোকসভা ভেঙে এগিয়ে আনা হোক নির্বাচন। তা হলেই এই চারটি রাজ্যের সঙ্গে লোকসভা ভোট একসঙ্গে করা যেতে পারে। অর্থাৎ এই চারটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার তাঁরা ঘোরতর বিরোধী।