জেলাশাসকের দফতরের সামনে সমাবেশ। শিলচর। ছবি: স্বপন রায়।
রেল প্রতিমন্ত্রী অসমের বিজেপি নেতা রাজেন গোঁহাইয়ের মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক আজও অব্যাহত। পক্ষকাল ধরে চলছে নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি। আজ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের তরফে রাজেনবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে শহরে মিছিল করে, রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে স্মারকপত্র পাঠানো হয়।
একই অসমে দুই-তিন ধরনের সরকারি ভাষা, এ আবার কেমন কথা!—বরাক উপত্যকাতেও সরকারি ভাষা অসমিয়ায় হওয়া উচিত, এই মন্তব্য করেই বিতর্কে জড়ান রেল প্রতিমন্ত্রী। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করছে। নাগরিক সভা ডেকে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সপ্তাহভর চলে গণস্বাক্ষর অভিযান। আজ বিভিন্ন সংগঠনের সংস্কৃতি কর্মীরা শিলচর রেলস্টেশন প্রাঙ্গণে জমায়েত হন। সেখান থেকে মিছিল এগোয় প্রেমতলা, জানিগঞ্জ হয়ে। পথে যোগ দেন অন্যান্য বহু সংগঠনের কর্মী-কর্তারা। এর মধ্যে রয়েছে কাছাড় হিন্দিভাষী ছাত্র পরিষদ, জৈন সমিতি, বরাক হিন্দি সাহিত্য সমিতি, নিখিল বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সাহিত্য সমিতি, মারোয়াড়ি যুব মঞ্চ-সহ বহু অবাঙালি সংস্থাও। ছিল বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন, শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা, ইন্ডিয়ান রেডক্রস সোসাইটি, ভাষাশহিদ স্টেশন অটোস্ট্যান্ড, নাগরিক স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। উধারবন্দ থেকে প্রতিবাদ জানাতে আসেন মাতৃভাষা ঐক্য মঞ্চের একটি প্রতিনিধি দলও। ছিলেন জেলা কংগ্রেস ও এসইউসিআই সদস্যরাও।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের মিছিল জেলাশাসকের অফিসের সামনে সমাবেশের চেহারা নেয়। ১০ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল পরে জেলাশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করে। বিভিন্ন সংগঠন এর আগে রাজেন গোঁহাইকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের দাবি করেছিল। আজ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ অবশ্য স্পষ্ট করে এমন দাবি না করলেও রাজেনবাবুর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানায়। তাঁদের অভিযোগ, বরাক উপত্যকার মানুষ বহু সংগ্রামের মাধ্যমে বরাকের সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি আদায় করেছে। বর্তমানে এটি বরাকবাসীর সাংবিধানিক অধিকার। এর বিরুদ্ধাচরণ করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এক দিকে যেমন সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন, অন্য দিকে রাজ্যের মধ্যে অশান্তি কায়েমের চেষ্টা করছেন। এই ধরনের মন্তব্য যে ভাষার নামে সংঘাতের জন্ম দেবে, সে ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে তাঁরা অবহিত করেছেন।
আজ রাজেন গোঁহাইর মন্তব্যের সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন বক্তারা। তাঁরা বলেন, ১১ জন কিশোর-কিশোরীর প্রাণের বিনিময়ে বরাক উপত্যকায় বাংলা সরকারি ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। একে বাতিল করার কোনও ষড়যন্ত্র তাঁরা মানবেন না। রাজেন গোঁহাইয়ের মন্তব্য বরাকে অসমিয়া চাপিয়ে দেওয়ার চক্রান্তেরই অঙ্গ বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।
অন্য দিকে, প্রবীণ বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ বলেন, ‘‘রাজেনবাবুর মন্তব্য যে দলের নয়, ব্যক্তিগত, তা মুখ্যমন্ত্রীই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এর পরেও কিছু ভাষা-সাহিত্য সংগঠন এই প্রসঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছে।’’