সন্ত রাম সিংহ।
সুপ্রিম কোর্ট আজ সকালেই বলেছিল, দিল্লির সীমানায় কৃষকদের প্রতিবাদ খুব শীঘ্রই ‘জাতীয় বিষয়’ হয়ে উঠবে। বিকেলেই দিল্লির সীমানায় কৃষকদের প্রতিবাদ নতুন মোড় নিল।
দিল্লি-হরিয়ানা সীমানার সিংঘুতে আজ সন্ত রাম সিংহ গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ তাঁকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পানীপতের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। দিল্লি শিখ গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটির চেয়ারম্যান মনজিন্দর সিংহ সিরসা জানান, কৃষকদের দুর্দশা সহ্য করতে না-পেরেই সন্ত রাম সিংহ আত্মহত্যা করেছেন। আত্মঘাতী হওয়ার আগে হরিয়ানার করনালের এই সন্ত একটি চিরকুটে লিখে গিয়েছেন, “আমার মন ব্যথিত। কৃষকদের উপর জুলুমের এটাই আমার প্রতিবাদ। কেউ নিজের পুরস্কার ত্যাগ করেছে। আমি নিজের জীবন ত্যাগ করলাম।”
এই ঘটনায় চাষিদের ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি পড়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী প্রয়াত সন্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে টুইটারে লিখেছেন, “অনেক কৃষক জীবন দিয়েছেন। মোদী সরকারের ক্রুরতা সব সীমা পার করে গিয়েছে। জেদ ছাড়ুন ও অবিলম্বে কৃষি-বিরোধী আইন প্রত্যাহার করুন।” পঞ্জাব-হরিয়ানার রাজনীতিকরা মনে করছেন, হরিয়ানার বাইরেও সন্ত রাম সিংহের যথেষ্ট ভক্ত রয়েছেন। এতে কৃষকদের আন্দোলন আরও জোরদার হবে। এই পরিস্থিতিতে সিরসা ও কৃষক নেতারা অবশ্য সকলকে শান্ত থাকতে বলেছেন। আজ কৃষি আইন সংশোধনের প্রস্তাব খারিজের সিদ্ধান্ত লিখিত ভাবে সরকারকে জানিয়ে দিয়েছেন কৃষক নেতারা।
আরও পড়ুন: দিদি-ফোনের পরেও সুনীলের বাড়িতে শুভেন্দুর সঙ্গে জিতেন্দ্রর বৈঠক
সুপ্রিম কোর্ট বুধবার ইঙ্গিত দিয়েছে, কৃষক-সরকার সংঘাত মেটাতে আদালত দু’পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দিতে পারে। কিন্তু কৃষক সংগঠনগুলি কার্যত সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ার পক্ষে। তাঁদের যুক্তি, কেন্দ্রের মন্ত্রীরা প্রথমেই প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তিন কৃষি আইনের ভালমন্দ খতিয়ে দেখতে দু’পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি প্যানেল তৈরি হোক। কৃষকরা তা মানতে চাননি। শীর্ষ আদালত সেই পুরনো প্রস্তাবটিই নতুন করে দিচ্ছে।
কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর আজ ফের যুক্তি দিয়েছেন, কৃষকদের আন্দোলন দু’-একটি রাজ্যেই সীমাবন্ধ। কিন্তু প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডে বলেন, ‘‘কৃষকদের প্রতিবাদ খুব শীঘ্রই জাতীয় বিষয় হয়ে উঠবে।
কিন্তু কৃষকদের সঙ্গে কেন্দ্রের দর কষাকষি আবার ব্যর্থ হবে। কারণ, কৃষকরা কেন্দ্রের শর্ত মানবেন না। আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধান করতে হবে।” বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকার ও কৃষক সংগঠন, দুই পক্ষের উপস্থিতিতেই শুনানি হবে। কিন্তু কৃষক নেতাদের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট আগে তিন আইনের বৈধতা বিচার করুক।
আরও পড়ুন: স্পিকার ডাকলে আবার এসে তাঁর হাতেই ইস্তফা দিয়ে যাবেন ‘মুক্ত’ শুভেন্দু
কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লার বক্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট যা বলেছে, তা কেন্দ্র প্রথমেই বলেছিল। কৃষকরা তাতে রাজি হননি।’’ স্বরাজ ইন্ডিয়ার নেতা যোগেন্দ্র যাদব বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট তিন আইনের বৈধতা বিচার করুক। এই সব আইন প্রয়োজন কি না, তা দেখা সুপ্রিম কোর্টের কাজ নয়।” কৃষক নেতাদের বক্তব্য, সরকার ও কৃষকদের প্রতিনিধিদের প্যানেলে ইতিমধ্যেই পাঁচ দফায় বৈঠক হয়ে গিয়েছে। কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। আদালত নতুন প্যানেল তৈরি করলে, কী লাভ হবে তাতে?
সুপ্রিম কোর্টে একটি কৃষক সংগঠন তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে মামলা করেছিল। এক জন আইনের ছাত্র কৃষকদের সড়ক অবরোধ তোলার দাবিতে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন। কৃষকদের দিল্লিতে ঢোকার অনুমতি দিয়ে যন্তর-মন্তরে প্রতিবাদ জানাতে দেওয়ার দাবি জানিয়েও মামলা হয়েছে। মোদী সরকারের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে জানান, কৃষকরা আইন প্রত্যাহার করা হবে কি হবে না, এর উত্তর ছাড়া আর কোনও কথা শুনতে রাজি নয়। তাই বিভিন্ন মন্ত্রীরা কথা বললেও কোনও লাভ হয়নি।
গত কয়েক দিনে প্রধানমন্ত্রী থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা কৃষক আন্দোলনের পিছনে বিরোধীদের ষড়যন্ত্র, খলিস্তানি, মাওবাদী, পাকিস্তান, চিনের মতো বিভিন্ন শক্তির হাত রয়েছে বলে দাবি করেছেন। আজ সেই সুরেই মেহতা আদালতে বলেন, ‘‘এখন মনে হচ্ছে, অন্য স্বার্থান্বেষী শক্তি কৃষকদের প্রতিবাদের রাশ হাতে তুলে নিয়েছে।’’ তবে কেন্দ্র চাষিদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করবে না, জানান মেহতা।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘কৃষকদের যখন সমস্যা হচ্ছে, তখন এ কথা বলে কী লাভ?’’ তিনি বলেন, “অধিকাংশ মামলাই ভাবনাচিন্তা ছাড়াই দায়ের হয়েছে। আন্দোলনকারীরা যাতায়াতের স্বাধীনতায় বাধা দিচ্ছেন। এ ছাড়া আর কোনও আইনি প্রশ্ন নেই। এর আগে শাহিন বাগের প্রতিবাদের প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, সড়ক আটকে প্রতিবাদ চলতে পারে না। কিন্তু আজ সেই যুক্তি শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, এতে কোনও লাভ হবে না। শাহিন বাগে রাস্তা অবরোধকারীর সংখ্যা যে অনেক কম ছিল, তা-ও ইঙ্গিত করেন তিনি।