রাহুলকে জুতো ছুড়ে ধৃত হরিওম মিশ্র। সোমবার সীতাপুরে। ছবি: পিটিআই
উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার ভোটকে পাখির চোখ করে রাজ্য জুড়ে কিসান যাত্রায় নেমেছেন রাহুল গাঁধী। সেই যাত্রা নিয়ে এমনিতে বিশেষ হইচই হচ্ছে না। কিন্তু নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যেই প্রচারের আলোয় উঠে আসছে কিসান যাত্রা।
উত্তরপ্রদেশে কিসান যাত্রার শুরুতেই রাহুলের ‘খাট সভা’ থেকে খাটিয়া নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন অনেক শ্রোতা। তা নিয়ে হইচই আর বিরোধীদের হাসাহাসিতে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছিলেন কংগ্রেস নেতারা। এ বার সেই যাত্রার আঠারো দিনের মাথায় রাহুলকে লক্ষ করে জুতো ছুড়লেন এক যুবক। যার হাত ধরে ফের প্রচারের আলোয় ফিরল কিসান যাত্রা।
রাহুলের খাটিয়া-সভার জন্য আনা সব খাটিয়া উধাও হয়ে যাওয়ায় কংগ্রেস নেতারা কেউ বলেছিলেন, উত্তরপ্রদেশের মানুষ আর্থিক ভাবে দুর্দশাগ্রস্ত বলেই তাঁরা এমন করেছেন। কেউ বলেছিলেন, রাহুলের সঙ্গে সাক্ষাৎকে স্মরণীয় করে রাখতেই খাটিয়া নিয়ে পলায়ন।
আজ সীতাপুরে খোলা গাড়িতে চেপে প্রচারের সময় রাহুলকে লক্ষ করে এক স্থানীয় যুবক জুতো ছোড়ার পরে তাকে রাজনৈতিক ভাবে কাজে লাগাতে চাইছে কংগ্রেস। রাহুল এই ঘটনার জন্য বিজেপি-আরএসএস-এর দিকেই আঙুল তুলেছেন। ওই ঘটনার পরে একটি জমায়েতে রাহুল বলেন, ‘‘আমার দিকে জুতো ছোড়া হয়েছে। আমার লাগেনি। কিন্তু আমি বিজেপি ও আরএসএস-কে বলতে চাই, আপনারা আমার দিকে যতই জুতো ছুড়ুন না কেন, আমরা পিছু হঠব না। আমি আপনাদের ভয় পাই না।’’
পুলিশ জানিয়েছে, যে যুবক রাহুলকে জুতো ছুড়েছেন, তাঁর নাম হরিওম মিশ্র। সীতাপুরে খোলা গাড়িতে করে রাহুল যখন প্রচার করছিলেন, সেই সময় রাহুলের গাড়ি থেকে বেশ দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। রাহুলের পিছনেই ছিলেন কংগ্রেস নেতা জিতিন প্রসাদ। পাশে আরও কয়েক জন। তাঁদেরই একজনের গায়ে জুতোটি এসে লাগে। সঙ্গে সঙ্গেই ওই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসপিজি নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও এই ঘটনা কী করে ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গ্রেফতারির পরে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন হরিওম। পুলিশের গাড়িতে তোলার আগে রীতিমতো উত্তেজিত ভাবে তিনি বলতে থাকেন, ‘‘উনি এখানে এসে বিদ্যুতের বিল অর্ধেক, কৃষকদের ঋণ মাফ করে দেওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু ষাট বছর ধরে কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল। তখন তারা কী করেছিল? তখন এ সব করেনি কেন?’’
উত্তরপ্রদেশ জুড়ে এক মাস ব্যাপী ২৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ কিসান যাত্রায় রাহুল মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে প্রচার করছেন। এক, কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় এলে বিদ্যুৎ বিল অর্ধেক করে দেবে। দুই, কৃষকদের ঋণ মকুব করা হবে। তিন, কৃষকদের চাহিদা মতো ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঠিক করা হবে। রাহুলের দিকে জুতো ছোড়ার পর ওই সব প্রতিশ্রুতি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন হরিওম। উরিতে নিহত শহিদদের প্রতি রাহুল শ্রদ্ধা জানাননি বলেও ক্ষোভ জানান হরিওম। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
রাহুল একা নন। এর আগে অরবিন্দ কেজরীবাল, প্রকাশ সিংহ বাদল, পি চিদম্বরমকে লক্ষ করে জুতো ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। দু’বছর আগে লোকসভার ভোট প্রচারের সময় নরেন্দ্র মোদীর মঞ্চ লক্ষ করেও জুতো ছোড়া হয়েছিল। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশও ছোড়া জুতোর নিশানা হয়েছিলেন।