সিসিটিভি ফুটেজে যৌন হেনস্থার ছবি ধরা পড়ল।
রাত তখন আড়াইটে। পূর্ব বেঙ্গালুরুর কাম্মানাহাল্লির রাস্তায় তখন বর্ষবরণের আনন্দে মাতোয়ারা অনেকে। বড় রাস্তায় অটো রিকশা থেকে নেমে নামলেন এক মহিলা। রাস্তা পেরিয়ে তাঁর বাড়ি মাত্র কয়েক মিটার দূরে। বড় রাস্তা ছেড়ে একটি নির্জন গলি দিয়ে একাই হেঁটে আসছিলেন তিনি। হঠাৎ একটি স্কুটার তাঁর সামনে এসে দাঁড়াল। স্কুটার বসে দু’জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। স্কুটার একপাশে রেখে স্কুটার থেকে নেমে এল এক জন। তার পর হঠাৎই ওই মহিলাকে জাপটে ধরল সে। চড়-থাপ্পড় মেরে বাধা দেওয়া সত্ত্বেও ওই মহিলাকে গলির কোণে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে চলল যৌন নিগ্রহ। তাতে যোগ দিল স্কুটারের অন্য আরোহীও। আতঙ্কিত মহিলার চিৎকার সত্ত্বেও তাঁর সাহায্যে এগিয়ে এল না কোনও পথচারী। মহিলাদের জন্য ‘নিরাপদ’ বেঙ্গালুরু শহরে বর্ষবরণের রাতে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল আগেই। সাম্প্রতিক এই সিসিটিভি ফুটেজে চরম অস্বস্তিতে সরকার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
আরও পড়ুন
বেঙ্গালুরুতে যথেচ্ছ যৌন হেনস্থার ঘটনায় কর্নাটক সরকারের নিন্দায় কেন্দ্র
৩১ ডিসেম্বর বর্ষশেষের জমায়েতে একাধিক মহিলার উপর যথেচ্ছ যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। দুষ্কৃতীদের হাতে লাঞ্ছিত হন অনেকেই। অভিযোগ, কটূক্তি, শ্লীলতাহানি-সহ যথেচ্ছ যৌন হেনস্থা চালানো হয় তাঁদের উপর। পুলিশকর্মীদের সামনেই হেনস্থা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার এহেন ভূরি ভূরি অভিযোগ সত্ত্বেও রাজ্য সরকার নির্বিকার থাকে। দেশ জুড়েই সংবাদমাধ্যমে শিরোনামে চলে আসে বেঙ্গালুরুর যৌন হেনস্থাকাণ্ড।
প্রাথমিক ভাবে গোটা বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে সরকার। শুধু তা-ই নয়, রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বর একের পর এক দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলেন। তিনি বলেন, “বড়দিন ও বর্ষবরণের রাতে এমন তো হয়েই থাকে।” এমনকী, ওই মহিলারা পশ্চিমী ভাবধারার অন্ধ অনুকরণ করতে গিয়েই এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। এরই মধ্যে সমাজবাদি পার্টি নেতা আবু আজমি-র বলে বসেন, “মেয়েরা ছোট পোশাক পরে বেশি রাতে বন্ধুদের সঙ্গে বেরোলে এমন তো হবেই।” এর পরই মহিলা কমিশনের তোপের মুখে পড়েন পরমেশ্বর ও আবু আজমি। দু’জনের ইস্তফার দাবিতে সরব হয় কমিশন-সমাজকর্মীরা। শহরের পুলিশ কমিশনার, কর্নাটকের ডিজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জবাব তলব করেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন ললিতা কুমারমঙ্গলম। নিন্দায় সরব হয় কেন্দ্র। টুইট করে ক্ষোভ উগরে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু।
আরও পড়ুন
মেয়েরা ছোট পোশাক পরলে এমন তো হবেই! বিতর্কে সপা নেতা
অবশেষে সক্রিয় হল কর্নাটক সরকার। চাপের মুখে বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার প্রবীণ সুদ স্বীকার করেন, বর্ষশেষের রাতে একাধিক যৌন হেনস্থার ঘটনার প্রমাণ মিলেছে। তাঁর দাবি, “এ নিয়ে নীবরেই কাজ করে যাচ্ছিল পুলিশ।” তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই শহরের ৪৫টি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশ কর্তার নেতৃত্বে একটি কমিশনও গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
দেখুন সেই ভিডিও