অমিত শাহকে অভ্যর্থনা শিবরাজের। ভোপালে সোমবার। ছবি: পিটিআই।
সিবিআই তদন্তের পরে ব্যপম কেলেঙ্কারি তাঁর গলার কাঁটা হয়ে উঠবে কি না সে প্রশ্ন থাকছেই। তবে আপাতত এই প্রসঙ্গে কিছুটা হলেও দম ফেলার সময় পেলেন শিবরাজ সিংহ চৌহান। সেটাকেই এ বার পুরো দস্তুর কাজে লাগাতে নেমে পড়লেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী।
ব্যপম কেলেঙ্কারিতে আজ থেকে তদন্তে নামল সিবিআই। এই মুহূর্তে সংবাদমাধ্যমের হইচই, শিবরাজকে নিশানা করে বিরোধীদের তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ এখন কিছুটা স্তিমিত। কিন্তু আশঙ্কা এ বার ঘরেই। শিবরাজ নরেন্দ্র মোদীর বিরোধী শিবিরের নেতা বলেই পরিচিত। ব্যপমের এখন তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। সেই পথে মোদী শিবরাজকে বেগ দিতে পারেন বলেই মনে করছেন অনেকে। রাজস্থানে দলের উপর বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার নিয়ন্ত্রণ আছে বলেই ললিত-কাণ্ডে অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও তাঁকে সরানো যায়নি। এ বার শিবরাজও একই ভাবে নিজের শক্তি দেখাতে নেমে পড়েছেন।
দলে নিজের অবস্থান মজবুত করতে কী করবেন শিবরাজ? রাজ্য জুড়ে স্বাভিমান যাত্রায় বেরোবেন তিনি। যে ভাবে গুজরাত হিংসার পর নিজের ভাবমূর্তি শোধরাতে ‘গৌরব যাত্রা’য় বেরিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। আপাত ভাবে শিবরাজের আক্রমণের লক্ষ্য হবে বিরোধী দল কংগ্রেস ও সংবাদমাধ্যমের একাংশ। ঠিক যে ভাবে মোদীও গুজরাতের হিংসার পর সংবাদমাধ্যমের একাংশ ও কংগ্রেসকে দায়ী করতেন। বিজেপির এক নেতার মতে, ‘‘শিবরাজ অভিজ্ঞ রাজনীতিক। তিনি মোদীর ধাঁচে যাত্রা করে বোঝাতে চাইবেন, তিনিও প্রধানমন্ত্রীর মতো রাজনীতির শিকার।’’
শিবরাজ এরই সঙ্গে অমিতকেও বোঝাতে চান, মধ্যপ্রদেশে তিনিই দলের একমাত্র মুখ। ব্যপম নিয়ে শোরগোল ওঠার পর থেকেই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে খুব একটা ইতিবাচক বার্তা পাচ্ছিলেন না। ক’দিন আগেও দিল্লি গিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ নেত্রী সুষমা স্বরাজ ছাড়া, শীর্ষ সারির কোনও নেতার দেখা পাননি। তিনি দিল্লি থেকে ফেরার পরে আজই দলের সভাপতির সঙ্গে দেখা হল শিবরাজের। দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানের অঙ্গ হিসেবেই অমিতের এই সফর। অমিতকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে যান শিবরাজ। পরে এক মঞ্চে উপস্থিত হন দুই নেতা। নিজের শহরে অমিতকে পেয়ে শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টায় খামতি রাখেননি শিবরাজ। যে ভাবে লোকসভা নির্বাচনের সময় তিনি মোদীর ভোট প্রচারে সব থেকে বেশি লোক জড়ো করে রেকর্ড গড়েছিলেন। এ দিনও দেখা গেল তেমনটাই। অমিতকে পাশে বসিয়ে রাজ্যে তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতার পরিচয় দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করলেন শিবরাজ। বিজেপি সভাপতি ভোপালে পা রাখার আগেই সুরটি বেঁধে দিয়েছিলেন রাজ্যের বিজেপি সভাপতি নন্দ কুমার সিংহ চৌহান। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ গঙ্গা জলের মতো পবিত্র। সিবিআই তদন্তেও তা প্রমাণিত হবে। ২০১৮ সালে মধ্যপ্রদেশে আবার যখন নির্বাচন হবে, তখন কংগ্রেসের যাবতীয় বিরোধিতায় জল ঢেলে চতুর্থ বারের জন্য ফের মুখ্যমন্ত্রী হবেন তিনি।’’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই ব্যপম তদন্তের জন্য চল্লিশ জনের একটি টিম গড়েছে। রাজস্থানের ভঁওয়ারি দেবী মামলায় যে অফিসার তদন্ত করেছিলেন, তাঁর নেতৃত্বেই এই দলটি কাজ করবে। তাঁদের কয়েক জন এর মধ্যেই ভোপালে পৌঁছে গিয়ে রাজ্য পুলিশের থেকে যাবতীয় নথি সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। সিবিআই সূত্রের মতে, ব্যপম কেলেঙ্কারি এতই ব্যাপক যে যাবতীয় নথি হাতে পেতেই মাস খানেক লেগে যাবে।
এই সময়টা শিবরাজের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরই মধ্যে রাজ্য জুড়ে তিনি পাল্টা প্রচারের হাওয়া তুলতে চান। আলোচনায় আনতে চান তাঁর সাফল্যগুলিকে। এবং সেই কাজটা তিনি আজ থেকেই শুরু করে দিয়েছেন। এ দিনই তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সরকারের আমলেই গত এক দশক ধরে মধ্যপ্রদেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার দুই অঙ্কের উপরে রয়েছে। সমাজের প্রতিটি স্তরের কল্যাণে তাঁর সরকার কী কী করেছে ও করছে সে সবও সবিস্তার তুলে ধরেন তিনি।
শিবরাজ-ঘনিষ্ঠ নেতারাই বলছেন, ব্যপম-সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে মুখ্যমন্ত্রী আটঘাট বেঁধেই এগোচ্ছেন। ব্যপম নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি ওঠা মাত্রই তিনি তাতে রাজি হয়ে যাননি। মামলার গতিপ্রকৃতি বুঝে নেওয়ার পরেই তিনি এ ব্যাপারে আর্জি জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আদালতে। আর এখন স্বাভিমান যাত্রায় বেরিয়ে পাল্টা প্রচারে নামতে চাইছেন। নজর ফেরাতে চাইছেন তাঁর সরকারের সাফল্যের দিকগুলিতে। সেই সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সমঝে দিতে চাইছেন মধ্যপ্রদেশে তাঁর শক্তি কতটা। এখন যেটা খুবই জরুরি হয়ে উঠেছে শিবরাজের কাছে।