শোলে ছবির সেই দৃশ্য।
‘জোশ’ থেকে ‘সন্নাটা’।
মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে বিজেপি আর শিবসেনার দর কষাকষি চলছেই। তারই মধ্যে শিবসেনার মুখপত্রে আর্থিক ঝিমুনি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে খোঁচা দিয়ে লেখা হল, ‘‘ইতনা সন্নাটা কিঁউ হ্যায় ভাই?’’ ‘শোলে’ ছবিতে এ কে হাঙ্গলের অমর উচ্চারণ— এত নৈঃশব্দ্য কেন?
রাজনৈতিক তরজায় ফিল্মি সংলাপ ঢুকে পড়া নতুন কিছু নয়। এই টুইট-মিম অধ্যুষিত যুগে তো নয়ই। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ সব ভালবাসেন। ভোটের আগে ‘উরি’ ছবি থেকে ‘হাউ ইজ় দ্য জোশ? হাই স্যর’ সংলাপ রাজনীতিতে জনপ্রিয় করেছিলেন তিনিই। মহারাষ্ট্র-হরিয়ানার ফলের পরে সেই ‘জোশ’ একটু ফিকে করে শিবসেনার পাল্টা কটাক্ষ এল বলিউড থেকে ধার করেই। আর্থিক সঙ্কটে এ বার দেওয়ালির বাজার অনেকটাই মিয়োনো। ‘সন্নাটা’র কথা তুলে শিবসেনার ইঙ্গিত সে দিকেই।
এই সন্নাটা-সংলাপ এর আগেও বিজেপির দিকে ধেয়ে এসেছে অবশ্য। বছর খানেক আগে গিরিরাজ সিংহ এক বার তোপ দেগে বলেছিলেন, যারা মোদীকে সমর্থন করে না, তাদের সবার পাকিস্তানে চলে যাওয়া উচিত। তার পরই একটা মিম ভাইরাল হয়, যেখানে উঠে এল ‘শোলে’র সেই দৃশ্য। হাঙ্গল সেখানে জিজ্ঞেস করছেন, ‘‘ইতনা সন্নাটা কিঁউ হ্যায় ভাই!’’ হেমা মালিনী উত্তর দিচ্ছেন, ‘‘কারণ সকলেই পাকিস্তানে চলে গিয়েছে!’’ একই ভাবে রাহুল গাঁধীকে আক্রমণ করে গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে অজস্র
মিম বাজারে এসেছে। তার কোনওটাতে ‘দিওয়ার’-এর সংলাপ ‘মেরে পাস মা হ্যায়’, কোনওটায় ‘গ্যাঙ্গস অব ওয়াসিপুর’— ‘বেটা তুমসে না হো পায়েগা!’
আশির দশকে, নির্দিষ্ট করে বললে ১৯৮৪-র ভোটে অমিতাভ বচ্চন যখন ইলাহাবাদে কংগ্রেস প্রার্থী হন, প্রতিদ্বন্দ্বী হেমবতীনন্দন বহুগুণা তাঁকে আক্রমণ করেছিলেন তাঁরই ফিল্মের গানের লাইন ব্যবহার করে। প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘মেরে অঙ্গনেমে তুমহারা কেয়া কাম হ্যায়?’’ ভোটের ফল অবশ্য তাঁকে চুপ করিয়ে দেয়।
অভিনেতারা যখন নির্বাচনে প্রার্থী হন, তখন নিজেদের জনপ্রিয় সংলাপ, গানের টুকরো প্রচারে ব্যবহার করেন অহরহ। কিন্তু সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত প্রচার। সিনেমা থেকে সংলাপ বেছে নিয়ে যখন তা তরজার হাতিয়ার করে তোলা হয়, তখন চেনা সংলাপই নতুন অর্থ নিয়ে আমজনতার সামনে আসে। এই লোকসভা ভোটের আগে যেমন ‘গাল্লি বয়’-এর ‘অপনা টাইম আয়েগা’ প্রায়শই ব্যবহার হত বিরোধী পরিসরে। নানা দলই নিজের করে নিয়েছিল ওই নির্দিষ্ট বাক্যবন্ধটি।
ঠিক যেমনটি বাংলায় বিভিন্ন পর্বে দেখা গিয়েছে ‘গুগাবাবা’ সিরিজের একাধিক সংলাপকে ঘিরে। যুদ্ধ-বিরোধী প্রচার মানেই হাল্লা রাজার অনুষঙ্গ, পালাবদলের ডাক মানেই দড়ি ধরে মারো টান...।
সাম্প্রতিক কালে জেএনইউ থেকে যাদবপুর, শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হলেই মিটিং-মিছিল-জনসভা আর মুঠোফোনে ঘুরেফিরে এসেছে হীরক-সংলাপ— এরা যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে।