শরদ পওয়ার। ফাইল চিত্র
চার বছর আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সনিয়া গাঁধী নিজেই শরদ পওয়ারকে বিরোধী জোটের প্রার্থী হতে অনুরোধ করেছিলেন। পওয়ার সে সময় রাজি হননি। আগামী বছর রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন। গত এক সপ্তাহের ঘটনাবলি দেখে কংগ্রেস শিবির মনে করছে, এ বার এনসিপি-সুপ্রিমো পওয়ার নিজেই রাইসিনা হিলের বাসিন্দা হওয়ার প্রস্তুতি শুরু করছেন।
দু’দিন আগেই শরদ পওয়ারের দিল্লির বাড়িতে বিরোধী দলের নেতা ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রাক্তন বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহা। সেই বৈঠকে কংগ্রেসকে ডাকা হয়নি। কংগ্রেসের জনা পাঁচেক নেতাকে ব্যক্তিগত স্তরে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাঁরা কেউ যাননি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আজ শিবসেনার দলীয় মুখপত্র ‘সামনা’ লিখেছে, রাহুল গাঁধীর উচিত সমস্ত বিরোধী দলকে একজোট করতে শরদ পওয়ারের সঙ্গে হাত মেলানো। রাহুল নিয়মিত কেন্দ্রের নীতিকে নিশানা করেন, কিন্তু তা শুধুই টুইটারে। পওয়ার তাঁর বাড়িতে যে বিরোধী নেতাদের বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন, তা রাহুলের করা উচিত ছিল।
যশবন্ত সিনহার রাষ্ট্র মঞ্চ-র ডাকা ওই বৈঠকে পওয়ার নিজেই জানিয়েছিলেন, তিনি শুধু ‘গৃহকর্তা’ মাত্র। বৈঠকের পরেও জানানো হয়, এটা কোনও বিজেপি-বিরোধী জোট নয়। কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিরোধী জোট তৈরির চেষ্টাও হচ্ছে না। কিন্তু ওই বৈঠকের আগে-পরে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে তিন বার বৈঠক করেছেন পওয়ার। এই ঘটনা পরম্পরা দেখেই কংগ্রেস শিবির মনে করছে, পওয়ার আসলে ২০২২-এ সব দলের কাছেই রাষ্ট্রপতি পদের গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চাইছেন।
গত বছরই শিবসেনা-র সঞ্জয় রাউত ও এনসিপি-র মজিদ মেমন রাষ্ট্রপতি পদের দাবিদার হিসেবে পওয়ারের নাম তুলে রেখেছেন। রাউতের মত ছিল, সমস্ত দলেরই ২০২২-এ রাষ্ট্রপতি পদের জন্য পওয়ারের নাম বিবেচনা করা উচিত। মেমন যুক্তি দিয়েছিলেন, এতে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি-র বিরুদ্ধেও হাওয়া তোলা যাবে। রাষ্ট্রপতি পদে লোকসভা-রাজ্যসভার সাংসদ, সব রাজ্যের বিধায়করা ভোট দেন। রাজ্যের জনসংখ্যার উপরে সাংসদ-বিধায়কদের ভোটের মূল্য নির্ভর করে। ২০২২-এ বিরোধী জোটের ভোটের মূল্য এনডিএ-র তুলনায় বেশি হবে কি না, তার অঙ্ক কষা শুরু হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের ভোটের উপরে অনেক কিছু নির্ভর করবে বলে বিরোধী শিবিরের মত। এনসিপি-র একাংশ আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে পওয়ারের ব্যক্তিগত সম্পর্ক খারাপ নয়। ফলে বিজেপি কী অবস্থান নেবে, তা-ও দেখার।
কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা, ২০১৭-য় পওয়ার সনিয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। তিনি হয়তো ২০১৯-এ বিজেপি হারলে বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশায় ছিলেন। কিন্তু ২০২৪-এ পওয়ারের ৮৩ বছর বয়স হবে। তিনি বিরোধী জোটের অনুঘটক হতে পারেন, নেতা নন। রাহুলকে কটাক্ষ করলেও আজ শিবসেনাও একই কথা বলেছে। পওয়ার মহারাষ্ট্রে শিবসেনা, এনসিপি, কংগ্রেস জোট তৈরিতে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন। শিবসেনার মুখপত্রে লেখা হয়েছে, পওয়ার বিরোধী জোটকে এককাট্টা করতে পারেন। কিন্তু তাতেও নেতৃত্বের প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কংগ্রেস নেতৃত্ব দেবে বলে যদি আশা করা হয়, তা হলে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেসের কোনও স্থায়ী সভাপতিই নেই।
শিবসেনা যে রাহুল গাঁধী তথা কংগ্রেসকেই বিরোধী জোটের নেতৃত্বে দেখতে চাইছে, সেই বার্তা দিয়ে সামনা-য় লেখা হয়েছে, কংগ্রেস রাষ্ট্র মঞ্চের বৈঠককে গুরুত্ব দিচ্ছে না। যদি রাহুল গাঁধী দিল্লিতে বিরোধীদের এককাট্টা করতেন, যেমনটা পওয়ার করেছিলেন, তা হলে বিরোধীদের তরফেও আরও শক্তিশালী মুখ দেখা যেত। শিবসেনার মতে, প্রধানমন্ত্রীর শরীরী ভাষা বদলে গিয়েছে। মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তা সত্ত্বেও বিজেপি আত্মবিশ্বাসী। কারণ বিরোধী শিবির দুর্বল ও ছত্রভঙ্গ।