প্রতিবাদী: মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি ও এনপিআর-বিরোধী সমাবেশ। শনিবার। পিটিআই
যাব কি যাব না?
যেতে দেবে কি দেবে না?
দেখা হবে কি হবে না?
এই তিন প্রশ্নেই শনিবার সরগরম রইল শাহিন বাগ।
বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, সিএএ-এনআরসি নিয়ে যে কেউ (এমনকি শাহিন বাগের প্রতিবাদীরাও) যদি তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান, তা হলে তিন দিনের মধ্যে তা করতে তিনি তৈরি। তবে তার জন্য আগাম সময় চাইতে হবে তাঁর দফতরের কাছে। শনিবার সেই কথার সূত্র ধরেই শাহিন বাগের প্রতিবাদীদের একাংশ জানান, রবিবার দুপুর দু’টোয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন তাঁরা। কিন্তু ‘দাদিদের’ এই ঘোষণার পরেই আরও বেশি করে চোখে পড়ছে শাহিন বাগের আন্দোলনকারীদের মধ্যে দানা বাঁধা মতের অমিল। সম্ভবত চওড়া হচ্ছে সেই ফাটলও।
কেন?
প্রথমত, এই মতের সঙ্গে সকলে যে একমত, তা নয়। প্রতিবাদীদের একাংশ মনে করেন, খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন, তখন তা কাজে লাগানো উচিত। যে কারণে তাঁদের তরফে এ দিন ঘোষণা, রবিবার মিছিল করে সকলে অমিত শাহের বাড়ি যাওয়ার।
আবার উদ্যোক্তাদের অন্যতম শাহিন কওসর বললেন, ‘‘এখনও এ বিষয়ে কোনও ঐকমত্য হয়নি। আলোচনা চলছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘অধিকাংশ জনই যাওয়ার পক্ষপাতী নন। বরং তাঁরা চান, কথা বলতে শাহিন বাগেই আসুন সরকারি প্রতিনিধিরা। কথা হোক এখানেই। সকলের সামনে।’’ সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি পর্যন্ত প্রতিবাদস্থলে এ নিয়ে কথা চলছে। এমনও শোনা যাচ্ছে, কাল পর্যন্ত জল মাপবেন আন্দোলনকারীরা। দেখবেন, পুলিশ আদৌ যেতে দিচ্ছে কি না। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে তার ভিত্তিতে।
দ্বিতীয়ত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে তো সরকারি অনুমতি প্রয়োজন। আগে সময় চাইতে হবে তাঁর মন্ত্রকের কাছে। মিছিল করার জন্য অনুমতি চাইতে হবে পুলিশের কাছে। সেই বিষয়গুলিও অন্তত এ দিন রাত্রি পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের বড় অংশের কাছে খুব স্পষ্ট নয়।
সময় চেয়েছেন কি না, তার উত্তরে আন্দোলনকারী এক দাদি বলছেন, ‘‘ও তো আমার ছেলে। ওর কাছে আবার আলাদা ভাবে সময় চাইতে হবে কেন!’’ মন্ত্রক সূত্রে খবর, এমন কোনও সাক্ষাতের কথা অন্তত তাদের জানা নেই। মিছিলের বিষয়ে অনুমতি দেওয়ার কথা জানায়নি পুলিশও।
তা হলে?
বয়স্কা এক আন্দোলনকারীর বক্তব্য, ‘‘এ তো সোজা বিষয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে কথা বলতে চেয়েছেন। আমাদের যেহেতু নির্বাচিত কিংবা বাছাই করা কোনও প্রতিনিধি নেই, তাই আমরা সবাই মিলে মিছিল করে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাব। অনুরোধ জানাব, সিএএ-এনআরসি-র মতো বিষয়গুলি ফিরিয়ে নেওয়ার। তিনি লিখিত ভাবে সেই আশ্বাস দিলেই আমরা খুশি।’’ এই প্রস্তাবে আপত্তি তোলা শিবির আবার পাল্টা বলছে, ‘‘নিজের ঘরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো আর এত লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না। যদি ধরেও নেওয়া যায় যে, মিছিল তাঁর বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছল, তা হলেই বা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে যাবেন কোন ৫-১০ জন? বন্ধ ঘরে কথার পরে সরকার বাইরে এসে যে উল্টো কথা বলবে না, তারই বা নিশ্চয়তা কী?’’
তা হলে জোর দিয়ে না-যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে না কেন? কেনই বা ক্যামেরার সামনে হঠাৎ ওই কথা বললেন আন্দোলনের
অন্যতম মুখ হিসেবে পরিচিত
জনা কয়েক দাদি?
এখানেও ঘুরপাক খাচ্ছে দু’রকমের তত্ত্ব। প্রথমত, আন্দোলনকারীদের ঐক্যে চিড় ধরার কথা শোনা যাচ্ছে বেশ কিছু দিন ধরেই। অনেকে বলছেন, সেই কারণেই ‘অফিসিয়াল’ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সংখ্যা তিনে পৌঁছেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বয়ান জারির উপরে চাপানো হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তার উপরে এখন যদি এ নিয়ে সংঘাত প্রকাশ্যে চলে আসে, তা হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়াই সমস্যা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, সেই কারণেই কাল রাতভর এবং এ দিনও সন্ধ্যা পর্যন্ত ঐকমত্যের খোঁজে আলোচনা চলছে শাহিন বাগে।