আগেই বাদ পড়েছেন ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া’র মুখ থেকে। এ বার কাটছাঁট করা হল তাঁর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। তবে এ ব্যবস্থা শুধু আমির খানের জন্যই নয়। তালিকায় রয়েছে শাহরুখ খান-সহ ২৫ জন বলিউড তারকার নাম।
কেন? ‘দেশে অসহিষ্ণুতার জের কেটে গিয়েছে অনেকটাই’— ব্যাখ্যা মুম্বই পুলিশের। তাতেই বিতর্ক দানা বাঁধছে। প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই কি তাই?
সম্প্রতি দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতা এবং আমিরের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল এই অভিনেতাকে। নভেম্বরে একটি অনুষ্ঠানে আমির বলেন, দেশের এই অসহিষ্ণু পরিবেশে সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আতঙ্কিত তাঁর স্ত্রী। জানান, দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। সমালোচনার মুখে পড়েন আমির। মুম্বইয়ে তাঁর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। তার আগে আমিরের ‘পিকে’ ছবি নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছিল। অন্য দিকে, আবু সালেমের লোকেরা তাঁকে হুমকি দিচ্ছে, পুলিশের কাছে এ অভিযোগও জানান আমির। সব মিলিয়ে এ সময় থেকেই আমিরের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়।
শাহরুখের জন্য অবশ্য এই ব্যবস্থা রয়েছে ২০১৩ সাল থেকেই। পুলিশ সূত্রে খবর, ‘মাই নেম ইজ খান’ করার পর নানা ভাবে খুনের হুমকি পান এই অভিনেতা। তার পর ২০১৩-র জানুয়ারিতে জামাত-উদ-দাওয়া প্রধান হাফিজ সঈদ ঘোষণা করেন, ভারতে থাকতে যদি ভয় করে, তা হলে পাকিস্তানে আশ্রয় দেওয়া হবে শাহরুখকে। এর পরে একটি ইংরেজি পত্রিকায় শাহরুখ লিখেছিলেন, কী ভাবে তিনি বারেবারে ‘সহজ নিশানা’ হয়ে উঠছেন। এতেও ছাড় মেলেনি। সোশ্যাল মিডিয়ার আক্রমণের মুখে পড়েন অভিনেতা।
‘কিন্তু পরিস্থিতি এখন অনেকটাই হাল্কা’— দাবি মুম্বই পুলিশের। তাদের বড় কর্তারা জানালেন, শাহরুখ-আমির, দু’জনকেই আগের মতো দু’জন করে সশস্ত্র কনস্টেবল দেওয়া হবে। প্রতি দিন দু’ভাগে তাঁরা দেহরক্ষী হিসেবে থাকবেন। মাঝে যে ভাবে দু’জন কনস্টেবল ছাড়াও এক জন দেহরক্ষী, পুলিশের এসকর্ট ভ্যান দেওয়া হতো, কাটছাঁট করা হয়েছে সেটুকুই। এক আইপিএস অফিসারের কথায়, ‘‘এত দিন ৪০ জন বলিউড তারকাকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হতো। এখন মাত্র ১৫ জনকে ওই স্তরের নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’’
কারা তাঁরা? অমিতাভ বচ্চন, দিলীপ কুমার, লতা মঙ্গেশকরের মতো প্রবীণ শিল্পীরা ছাড়াও অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল থাকছে অক্ষয় কুমার, মহেশ ও মুকেশ ভট্টদের। কারণ হিসেবে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, অক্ষয়ের ‘ও মাই গড’, ‘খিলাড়ি ৭৮৬’ মুক্তি পাওয়ার পর একাধিক হুমকি ফোন পান তিনি। এ ছাড়াও মুম্বইয়ের অন্ধকার জগতের থেকে নানা সময়ে চাপ দেওয়া হয়েছে অক্ষয়কে। অভিনেতার আরও অভিযোগ, ৪৬ বছরের এক পরিচারিকাকে কাজ থেকে ছাঁটাই করে দেওয়ার জন্য প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় তাঁকে। অন্য দিকে, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের হুমকি রয়েছে ভট্ট-ভাইদের নামে।
প্রশ্ন উঠছে সেখানেই। যদি অক্ষয় কুমারকে ‘অতিরিক্ত’ নিরাপত্তা দেওয়া হতে পারে, তা হলে শাহরুখ-আমিরের মতো তারকার জন্য তা ‘বাড়তি’ হয়ে পড়ছে কী ভাবে? যে বিতর্কে জড়িয়ে ছিল দুই তারকার নাম, তার পরে মাত্র দু’মাস কেটেছে। সত্যিই কি এখন আর তাঁদের অতিরিক্ত নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই? জবাব খুঁজতে গিয়ে রাজনীতির ছায়া দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই।
যদিও মুম্বই পুলিশের বক্তব্য, কমানো কোথায় হয়েছে! আগে যা ব্যবস্থা ছিল, তা-ই রয়েছে। মাঝে কিছু দিন পরিস্থিতি বুঝে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়। তাঁদের ব্যাখ্যা, ‘‘সেলেব্রিটিদের জন্য এই অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করতে গিয়ে শুধু শুধু পুলিশের লোকবল নষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি এই নিয়ে সরকারি স্তরে হিসেবে-নিকেশ হয়েছে। আর তার পরই কাটছাঁট করা হচ্ছে।’’ শাহরুখ-আমির ছাড়াও তালিকায় রয়েছেন রাজকুমার হিরানি, ফারহা খান, বিধু বিনোদ চোপড়ার নাম।
এ নিয়ে নীরবই থেকেছেন শাহরুখ। আমির অবশ্য পুলিশের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘শহরের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের ওই কর্মীদের আরও ভাল ভাবে ব্যবহার করা হোক। পুলিশ যখন মনে করবে, আবার নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। মুম্বই পুলিশের উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে।’’