Aarey

বনাঞ্চল সাফ করে মেট্রোর কারশেড, সরকারি সিদ্ধান্তে হুলস্থুল মুম্বইয়ে, গ্রেফতার ২৯ সমাজকর্মী

প্রায় ৫ লক্ষ সবুজ গাছপালায় ঢাকা ১২৮০ হেক্টর আয়তনের অ্যারে মায়ানগরীর ফুসফুস হিসাবে পরিচিত।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৯ ১৭:৫৯
Share:

গাছ কেটে ফেলায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন এক আন্দোলনকারী। ছবি: রয়টার্স।

মেট্রোর কারশেড গড়তে ফাঁকা করে দেওয়া হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। কেটে ফেলা হচ্ছে প্রায় হাজার তিনেক গাছ। তা নিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড মু্ম্বইয়ের গোরেগাঁওয়ের অ্যারে কলোনিতে। সবুজ রক্ষা আন্দোলনে নেমে শু্ক্রবার রাত থেকে ২৯ জন সমাজকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন সেখানে। তাঁদের বিচার বিভাগীয় হেপাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলা দায়ের হয়েছে মোট ৩৮ জনের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও শনিবার সকালে আন্দোলনকারীরা এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁদের রাস্তা আটকায় পুলিশ।

Advertisement

প্রায় ৫ লক্ষ সবুজ গাছপালায় ঢাকা ১২৮০ হেক্টর আয়তনের অ্যারে মায়ানগরীর ফুসফুস হিসাবে পরিচিত। ওই এলাকাতেই মেট্রোর রেলের কারশেড ডিপো গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীসের সরকার। তার জন্য ২ হাজার ৬৪৬টি গাছ কাটার অনুমতি দেয় বৃহন্মুম্বই পুরসভার বৃক্ষ বিভাগ। তা নিয়ে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং সরকারের মধ্যে গত দু’বছর ধরে টানাপড়েন চলছে। মামলা গিয়ে পৌঁছেছে সুপ্রিম কোর্ট এবং জাতীয় পরিবেশ আদালতেও (ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল)। তার মধ্যেই সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পরিবেশকর্মী এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে বম্বে হাইকোর্টে চারটি আবেদনও জমা পড়ে। তাতে গাছ কাটা বন্ধের আর্জি জানানোর পাশাপাশি, অ্যারে কলোনির ওই এলাকাকে ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চল’ ঘোষণার দাবি জানায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘বনশক্তি’।

কিন্তু শুক্রবার তাঁদের আর্জি খারিজ করে দেয় বম্বে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রদীপ নন্দরাজোগ এবং বিচারপতি ভারতী দাঙরের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত জানায়, ‘‘পরিবেশপ্রেমীরা মনে করেন, প্রকৃতি এবং পরিবেশের সঙ্গে তাঁদের যে সম্পর্ক, একমাত্র তা-ই চিরন্তন সত্য। বাকি সমস্ত সম্পর্ক অস্থায়ী। এ ক্ষেত্রেও উন্নয়নের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন বটে, কিন্তু এই লড়াই দিশাহীন।’’ অ্যারে কলোনিকে ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চল’ ঘোষণা করতে গেলে, যে আইনি পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত, আন্দোলনকারীরা সে ব্যাপারেও উদাসীন বলে মন্তব্য করে আদালত।

Advertisement

আরও পড়ুন: বংশপরম্পরার রাজনীতিই ভোটে ডুবিয়েছে, জানাল কংগ্রেসের কমিটি​

আদালতের আবেদনগুলি খারিজ করার পর শুক্রবার রাতেই অ্যারে কলোনিতে গাছ কাটার কাজ শুরু হয়। সে খবর কানে যেতেই সেখানে পৌঁছে যান আন্দোলনকারীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় গাছ কাটার ছবি এবং ভিডিয়োও পোস্ট করতে শুরু করেন তাঁরা। প্রশ্ন ওঠে রাতের অন্ধকারে তাড়াহুড়োয় গাছ কাটা নিয়ে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত সেখানে প্রায় ১০০০ খানেক গাছ কাটা হয়ে গিয়েছে বলে জানান এক সমাজকর্মী। সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে গাছ কাটা হচ্ছে বলেও দাবি করেন আন্দোলনকারীদের অনেকে। তাঁদের কথায়, ‘‘গ্রেটার মুম্বইয়ের পুরসভা (এমসিজিএম)-এর নিয়ম অনুযায়ী আদালতের নির্দেশ তাদের ওয়েবসাইটে পোস্ট হওয়ার ১৫ দিন পরেই গাছ কাটা যায়। অ্যারে কলোনির ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। এ দিন সন্ধ্যায় ওয়েবসাইটে আদালতের নির্দেশ পোস্ট হওয়ার পর, রাতেই বুলডোজার নামিয়ে গাছ কাটা শুরু করে পুরসভা। সপ্তাহান্তে কোর্ট বন্ধ থাকবে। এর পর দশেরা উপলক্ষেও বন্ধ থাকবে আদালত। আদালত যত দিনে খুলবে, তত দিনে গোটা এলাকা ফাঁকা হয়ে যাবে। চ্যালেঞ্জ জানানোর উপায়ই থাকবে না।’’

এ নিয়ে এমসিজিএম-এর তরফে কোনও মন্তব্য না করা হলেও, ১৫ দিনের নোটিসের যুক্তি উড়িয়ে দিয়েছেন মুম্বই মেট্রো রেল কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অশ্বিনী ভিড়ে। তাঁর দাবি, ‘‘১৫ দিনের নোটিস নিয়ে ভুল তথ্য রটানো হচ্ছে। তা যদি হয়ও, এর আগে গাছ কাটায় অনুমতি দিয়েছিল বৃহন্মুমম্বই পুরসভার বৃক্ষ বিভাগ। গত ১৩ সেপ্টেম্বর সেই নির্দেশিকা জারি হওয়ার পর এমনিতেই ১৫ দিন কেটে গিয়েছে। আমরা হাইকোর্টের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।’’

গাছ কাটা নিয়ে ইতিমধ্যেই মেট্রো কর্তৃপক্ষের পাশে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। উন্নয়ন এবং পরিবেশ রক্ষা একই সঙ্গে হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। তিনি বলেন, ‘‘হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, আরে কোনও অরণ্য নয়। এই মুহূর্তে দিল্লি মেট্রো বিশ্বসেরা। কিন্তু তা হল কী ভাবে? প্রথম মেট্রো স্টেশন গড়ার সময় ২০-২৫টি গাছ কাটা হয়েছিল। তখনও বিক্ষোভ হয়েছিল। কিন্তু একটি গাছ কাটলে, তার পরিবর্তে আরও পাঁচটি গাছ বসিয়েছে মেট্রো। এই মুহূর্তে সেখানে ২৭১টি স্টেশন রয়েছে। দিল্লিতে বনাঞ্চলের আয়তন বেড়েছে। নিত্য যাতায়াতের জন্য ৩০ লক্ষ মানুষ সেখানে মেট্রো চাপেন। এটাই উন্নয়ন এবং পরিবেশ রক্ষার মন্ত্র। দু’টোই এক সঙ্গে চালিয়ে যেতে হবে।’’

পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি আন্দোলনকারীদের। ছবি: পিটিআই।

আরও পড়ুন: বিদেশি অবিবাহিত নারী-পুরুষকে একই সঙ্গে হোটেলে থাকার অনুমতি দিল সৌদি সরকার​

তবে এ ব্যাপারে আন্দোলনকারীদেরই পক্ষ নিয়েছেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের ছেলে আদিত্য ঠাকরে। এই অদূরদর্শিতার পর জলবায়ু কেন্দ্রীয় জলবায়ু দফতরের অস্তিত্ব থাকা চলে না এবং প্লাস্টিক ও দূষণ নিয়ে তাদের কথা বলা চলে না বলে নিজের টুইটার হ্যান্ডলে মন্তব্য করেছেন তিনি। আন্দোলনকারীদের গ্রেফতারির বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানান আদিত্য ঠাকরে।

আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়াতে এ দিন সকালেই আরে কলোনিতে ছুটে যান শিবসেনা নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী। কিন্তু সেখানে ঢোকার মুখেই পুলিশ তাঁকে আটকায় এবং ফিরে আসতে বাধ্য করে বলে টুইটারে অভিযোগ করেন তিনি। অমিতাভ বচ্চন, বরুণ ধবন-সহ মুম্বইয়ের বহু তারকাও আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement