প্রতীকী চিত্র।
ছয় বছরের বেশি বয়সি জনসংখ্যার প্রায় ৬৭.৬ শতাংশের শরীরে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়ার অ্যান্টিবডির সন্ধান পাওয়া গেল ভারতে। এই সংখ্যা গোটা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরে মূলত জুন-জুলাই মাসে ওই সমীক্ষা করা হয় দেশ জুড়ে। তবে সংক্রমণ, নাকি প্রতিষেধক নেওয়া— কিসের কারণে ওই অ্যান্টিবডি শরীরে তৈরি হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর চতুর্থ সেরো সমীক্ষা।
এ বারের রক্ত পরীক্ষার সমীক্ষা থেকেই দু’টি বিষয় স্পষ্ট। প্রথমত, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বড়দের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে আক্রান্ত হয়েছে ছোটরা। দ্বিতীয়ত, জনগোষ্ঠীতে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা (হার্ড ইমিউনিটি) ক্রমশ বাড়ছে। বিজ্ঞানীদের মতে, জনগোষ্ঠীতে ৭০% থেকে ৮০% মানুষের হার্ড ইমিউনিটি হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে আর পাঁচটা রোগের মতোই সাধারণ রোগে পরিণত হবে কোভিড। গত জানুয়ারিতে প্রথম ঢেউয়ে দেশের ২৪% মানুষ করোনার শিকার হয়েছিলেন। জুন-জুলাইয়ে করা সমীক্ষা থেকে স্পষ্ট, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ বছর লকডাউন সত্ত্বেও সংক্রমণ কার্যত ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছিল।
সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ দোরগোড়ায়। স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, সেরো সমীক্ষা থেকে স্পষ্ট, এখনও দেশের প্রায় ৪০ কোটি মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে। আজ আইসিএমআরের প্রধান বলরাম ভার্গব বলেন, জনগোষ্ঠীর ৬৭%-এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়ায় অন্ধকারে আলোর রেখা দেখা যেতে শুরু করেছে। তবে দেশ হার্ড ইমিউনিটির দিকে এগিয়ে গেলেও আগামী দিনে যাতে কোভিডের সতর্কবিধি না-ভাঙার চেষ্টা করা হয়, তার উপরে জোর দিয়েছেন ভার্গব। তাঁর মতে, সেরো সমীক্ষা অনুযায়ী দেশের ৪০ কোটি মানুষ যে কোনও সময়ে কোভিড-আক্রান্ত হতে পারেন। তাই তৃতীয় ঢেউয়ের আগে সব ধরনের সতর্কতা মানতে হবে দেশবাসীকে।
২১টি রাজ্যের ৭০টি জেলার ২৮,৯৭৫ জনের উপরে চতুর্থ দফার সেরো সমীক্ষা চালায় আইসিএমআর। সমীক্ষায় রক্ত নেওয়া হয়েছে ৭২৫২ জন স্বাস্থ্যকর্মীর থেকেও। সমীক্ষায় ৮৫% স্বাস্থ্যকর্মীদের অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছে। মোট স্বাস্থ্যকর্মীদের ১০.৫% সমীক্ষায় জানান, তাঁরা এখনও প্রতিষেধক নেননি। প্রথম তিনটি সেরো সমীক্ষা যে এলাকাগুলিতে হয়েছিল, চতুর্থ সেরো সমীক্ষায় সেই এলাকাগুলি থেকেই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তবে এ বারের সমীক্ষায় এই প্রথম বার ছ’বছরের ঊর্ধ্বে থাকা শিশুদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৫-৬০ বছর বয়সিরা সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছেন। ৬২.২% এখনও টিকাকরণের বাইরে থেকে গিয়েছেন। টিকাপ্রাপকদের মধ্যে ২৪.৮% প্রথম ডোজ় ও ১৩% দ্বিতীয় ডোজ় পেয়েছেন। ৬-১২ বছর বয়সি শিশু ও অল্পবয়সিদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হওয়ার হার ৫৭.২%। শহর ও গ্রাম, কিংবা মহিলা ও পুরুষদের মধ্যে সংক্রমণের হার প্রায় সমান বলে জানিয়েছে সমীক্ষা।