অমিত শাহকে নিশানা করেই নিজেদের শক্তি অটুট রাখতে চাইছেন বিজেপি-র প্রবীণ বিক্ষুব্ধ নেতারা।
বিহার বিপর্যয়ের পর যে মুরলীমনোহর জোশীর বাড়িতে কয়েক দফা বৈঠকের পর বিবৃতি-বোমাটি তৈরি হয়েছিল, তাঁর সঙ্গে গত কাল দেখা করেন নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি অরুণ জেটলি। কিন্তু তাতে বিক্ষুব্ধদের শক্তিতে যাতে কোনও ভাটা না পড়ে, তা সুনিশ্চিত করতে বিক্ষুব্ধ নেতা যশবন্ত সিনহা আজ জোশীর বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় হাত নাড়িয়ে বলেন, লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গেও দেখা করবেন। সূত্রের মতে, ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মধ্যে সভাপতি পদে ফের বসার কথা অমিত শাহের। সেটি যে কোনও মূল্যে ঠেকানোই এই বিক্ষুব্ধ নেতাদের লক্ষ্য।
ঠিক একই ভাবে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে একসময় নিতিন গডকড়ীর সভাপতি পদ ঠেকিয়ে দিতে পেরেছিলেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও। যে দিন দুপুর পর্যন্ত গডকড়ী নিজেকে ‘নিষ্কলঙ্ক’ বলে দাবি করে এসেছেন, প্রবল চাপের মুখে তাঁকে শেষ পর্যন্ত সরতে হয়েছিল। পরে রাজনাথ সিংহকেও সভাপতি হিসেবে সাদরে আলিঙ্গন করে নিয়েছিলেন আডবাণীরা। কিন্তু গডকড়ীর বিদায় সুনিশ্চিত করা হয়েছিল। বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর মতে, এ বারেও প্রথম বোমাটি ফাটানো হয়েছে। এর পর যে ভাবে গতিপ্রকৃতি এগোবে, ততই চেষ্টা করা হবে অমিত শাহের বিদায়ও সুনিশ্চিত করা।
কিন্তু বিজেপি-র এক নেতার মতে, নিতিন গডকড়ী আর অমিত শাহের মধ্যে ফারাক রয়েছে। গডকড়ীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু অমিত শাহের বিরুদ্ধে সেটি নেই। নির্বাচনে অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণীরাও হেরেছেন। আর গডকড়ীর সময়ে বিজেপি বিরোধী দলে ছিল। আর এখন বিজেপি ক্ষমতায়। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী। অমিত শাহকে গুজরাত থেকে দিল্লিতে এনে সভাপতি করেছেন মোদীই। ফলে অমিত শাহকে সরানো বা না সরানোর পিছনে মোদীর ভূমিকাও অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় কয়েক জন বিরোধিতা করলেই অমিত শাহকে সরানো যাবে না। সব থেকে বড় বিষয় হল, এর পর যিনি সভাপতি হবেন, তিনি ২০১৯ সাল পর্যন্ত থাকবেন। সেই বছরেই লোকসভা নির্বাচন। ফলে নরেন্দ্র মোদী কি চাইবেন, এমন কাউকে সভাপতি পদে মেনে নিতে যাঁর হাতে লোকসভার ভার থাকবে?
বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী চাইছে, এক বার মোদী-শাহের জুটি ভেঙে দিতে পারলে প্রধানমন্ত্রীই আরও দুর্বল হবেন। বিবৃতি দিয়ে যে বিষয়টি তোলা হয়েছে, সেটি একটি বা দু’টি নির্বাচনে হারের প্রশ্ন নয়। আসল বিষয় হল, যে ভাবে দলটিকে কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে। এই মানসিকতার বিরুদ্ধে দলের সিংহভাগ নেতার অসন্তোষ রয়েছে। এমনকী তাঁদের মধ্যেও, যাঁরা আডবাণীদের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন। আজ বেঙ্কাইয়া নায়ডু ফের বিবৃতি দিয়ে বলেন, বিক্ষুব্ধ নেতারা তাঁদের অসন্তোষ দলের মধ্যেই বলতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কিছু বলছেন না। বলছেন, দলের কৌশল নিয়ে। অর্থাৎ ঘুরপথে বেঙ্কাইয়াও আজ দলের কৌশল নির্ধারণকারী নেতা অমিত শাহের বিরুদ্ধেই এই মন্তব্য বলে স্বীকার করছেন।
জোশীর বাড়িতে সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত নেতা গোবিন্দাচার্যও দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আজ দায় ঝেড়ে বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। আর বিহারের নির্বাচন নরেন্দ্র মোদী সরকারের জনমতও নয়।’’ নিতিন গডকড়ীও নাগপুর থেকে একটি বিবৃতি জারি বলেন, ‘‘আমি কখনওই লালকৃষ্ণ আডবাণী বা মুরলীমনোহর জোশীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলিনি।’’ বিক্ষুব্ধ শিবিরের মতে, সে দিন তিন প্রাক্তন সভাপতিকে দিয়ে বিবৃতি দেওয়ানো হলেও ধীরে ধীরে সুর নরম হচ্ছে এক এক জনের। এ বারে তাঁরাও নিশ্চয় দলের ভিতরে অমিত শাহের সভাপতির মেয়াদ ঠেকাতে তৎপর হবেন।