রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন শিবশঙ্কর। নিজস্ব চিত্র
গত ফেব্রুয়ারিতেই এসেছিল খবরটা। পুরুলিয়ার কাশীপুরের শিবশঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের খনি মন্ত্রকের ‘ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড’ পাচ্ছেন।’ শুনে খুব খুশি হয়েছিলেন মা। বলেছিলেন, ‘‘আমিও যাব তোর সঙ্গে।’’ সম্প্রতি নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছেন শিবশঙ্কর। কিন্তু মা বুলুরানি গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই ইচ্ছা আর পূরণ হয়নি। এপ্রিলে প্রয়াত হয়েছেন তিনি। শিবশঙ্কর বলছিলেন, ‘‘আমার গবেষণা সম্পর্কে জানতে চাইতেন মা। দেশের জন্য কিছু করতে বলতেন। সেটাই চেষ্টা করি।’’
শিবশঙ্করের গবেষণা আসলে বিশ্ব-উষ্ণায়নের সঙ্গে লড়াই। কানপুর আইআইটির ভূ-পদার্থবিদ্যার শিক্ষক ওই যুবক জানান, ক্রমশ বাতাসে বেড়ে চলেছে কার্বন ডাই অক্সাই়ড। পরিবেশের সেই গ্যাস ভূগর্ভে পাঠিয়ে কী ভাবে আরও বেশি জ্বালানি তেল সংগ্রহ করা যেতে পারে, সেটাই তাঁর গবেষণার বিষয়। শিবশঙ্কর বলেন, ‘‘গুজরাতে কাম্বে বেসিনে জ্বালানি তেলের খনি রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে উত্তোলনের ফলে খনিতে সঞ্চিত তেলের ভাঁড়ারে টান পড়ছে। সেখানে এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে তেলের উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে। পরিবেশে বাড়তি কার্বন ডাই অক্সাইডের কিছুটা হিল্লে করা সম্ভব এ ভাবে।’’
আদত বাড়ি কাশীপুরে। পঞ্চকোটরাজ হাইস্কুল থেকে ২০০২ সালে মাধ্যমিক। তার পরে আদ্রা নিগমনগর নিগমানন্দ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হয়েছিলেন রঘুনাথপুর কলেজ। পদার্থবিদ্যায় অনার্স। পাশ করে ২০০৮ সালে যান ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে জিওফিজিক্স স্কুল অব মাইনসে। ভূতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে হায়দরাবাদের ন্যাশন্যাল জিওলজিক্যাল রিসার্চ ইন্সস্টিটিউটে গবেষণা করার সুযোগ পান শিবশঙ্কর। ২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত গবেষণা করেছেন। তার পরে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন কানপুর আইআইটিতে। শিবশঙ্কর বলেন, ‘‘হায়দরাবাদে থাকাকালীন আমি এই বিষয়টি নিয়েই গবেষণা করছিলাম। তখনই আমার গবেষণাপত্র কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জমা পড়েছিল। বিশ্বের অনেক দেশেই এ নিয়ে কাজ হলেও ভারতে সে ভাবে হচ্ছে না।’’
জেলার কৃতী এই যুবক চান পুরুলিয়ার, বাংলার ছাত্রছাত্রীরা আরও গবেষণা করুক। আর শিকড় থাকুক মাটিতেই। শিবশঙ্করের বাল্যবন্ধু কল্যাণ চৌধুরী বেকো হাইস্কুলে পদার্থবিদ্যার শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘‘খবরটা পেয়ে ফোন করেছিলাম। নিজের কথা বলতেই চায় না। কাশীপুরের কথা শুনতে চায় শুধু। ও দেখিয়ে দিয়েছে, লক্ষ্যে অবিচল থাকলে সাফল্য ঠিক আসে।’’