প্রতীকী ছবি।
যত আকর্ষণ গো-ধনে!
‘গো-মাতাকে’ প্রধানমন্ত্রীর নিজে হাতে খাওয়ানো হোক বা গোশালা নির্মাণে বাজেটে মোটা বরাদ্দ— গরুর প্রতি ‘ভক্তি এবং দুর্বলতা’ মোদী কিংবা যোগী সরকারের নতুন নয়। এ বার আরও এক পা এগিয়ে দেশি গরুর উপরে গবেষণা করার প্রস্তাব চেয়ে বিজ্ঞাপন দিল কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক। যা আসলে শিক্ষার গৈরিকীকরণ বলে অভিযোগ তুলেছে বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই। দেশে গবেষণা ও উদ্ভাবনে যেখানে সরকারি বরাদ্দে খরা, সেখানে এমন বিষয়ের অগ্রাধিকার পাওয়া আদপে পিছনের দিকে হাঁটা বলেও বিরোধীদের অভিযোগ।
ওই বিজ্ঞাপনে মন্ত্রকের দাবি, উন্নত গুণমান এবং বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য দেশি গরুর কদর বিশ্ব জোড়া। তাদের অটুট স্বাস্থ্য, খাবারের কম চাহিদা, প্রবল গরমের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি কারণে না কি অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিলের মতো বিভিন্ন দেশের বাজারে তার চাহিদা মারকাটারি। আর সেই কারণে দেশি গরু নিয়ে গবেষণা জরুরি বলে মোদী সরকারের অভিমত।
দেশি গরুর অঢেল গুণ সম্পর্কে সন্দেহ নেই। কিন্তু অনেকের প্রশ্ন, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও যদি ভারতীয় গরু সত্যিই পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে থাকে, তা হলে আরসিইপি (১৬ দেশের প্রস্তাবিত বাণিজ্য চুক্তি) সইয়ের কথা ওঠার সময়ে স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের গলায় উল্টো
সুর ছিল কেন? কেনই বা আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল যে, ওই চুক্তি হলে, ভারতের দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের বাজারের বড় অংশ দখল করে নেবে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজ়িল্যান্ড? পথে বসবেন গরুপালকেরা!
বিজ্ঞাপনের বক্তব্য, দেশি গরুর শরীরজাত বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করে রোগ সারানোর কথা আয়ুর্বেদে রয়েছে। যাকে বলা যেতে পারে ‘কাওপ্যাথি’! বীর-চরক সংহিতা, শুশ্রুত সংহিতার মতো গ্রন্থে এ ধরনের পদ্ধতির উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী, তা কাজে লাগতে পারে বাত, কিডনির সমস্যা, অ্যাসিডিটি, প্রেশার, শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, এমনকি ক্যানসারের মতো রোগ সারানোর চেষ্টায়। ইঙ্গিত, সেই কারণে এ বিষয়ে গবেষণায় জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মন্ত্রক ছাড়াও তাতে শামিল হচ্ছে আয়ুর্বেদ মন্ত্রক এবং বিভিন্ন দফতর।
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার কটাক্ষ, ‘‘বিজেপি সর্বক্ষণই পিছনের দিকে হাঁটে। সব কিছু খুঁজে পায় বৈদিক ভারতে। পক্ষীরাজ রথকে বিমান, মহাভারতে অর্জুনের তিরকে ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে ব্যাখ্যা করা তাদের পক্ষেই সম্ভব। সনাতন ভারতের ঐতিহ্য যে গর্ব করার মতো, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সবই যদি আগেই আবিষ্কার হয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে তো
নতুন গবেষণার আর প্রয়োজন থাকে না।’’ একই সঙ্গে তাঁর ইঙ্গিত, হিন্দুত্বের প্রচারে ‘সুড়সুড়ি’ দিতেই বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মন্ত্রকের গবেষণার বিজ্ঞাপনেও ঠাঁই পাচ্ছে গরু। যা শুনে অনেকে অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, মধ্যপ্রদেশে তখ্ত দখলের পরে কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কমলনাথেরও প্রথম সিদ্ধান্ত ছিল গোশালা নির্মাণ।
এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাসের প্রশ্ন, ‘‘একে গবেষণায় সরকারি বরাদ্দের টানাটানি। কত ভাল বিষয়ে (এমনকি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও) টাকার অভাবে কাজ এগোতে পারছেন না অনেকে। সেখানে সরকারের এমন খাতে টাকা ঢালা কি সত্যিই যুক্তিযুক্ত?’’
গত প্রায় দু’দশক ধরে জিডিপি-র অনুপাতে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বাজেট বরাদ্দ প্রায় বাড়েনি বললেই চলে। তা আটকে আছে ০.৬ থেকে ০.৭ শতাংশের মধ্যে। ভারত যে সমস্ত দেশের সঙ্গে প্রযুক্তিতে পাল্লা দিতে চায়, সেই আমেরিকা (২.৮%), চিন (২.১%), ইজরায়েল (৪.৩%), কোরিয়ায় (৪.২%) তা অনেক বেশি।
ভারতে তা জিডিপির অন্তত ২% হওয়া উচিত বলে সুপারিশ করেছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিষদও। এই যেখানে হাঁড়ির হাল,
সেখানে ওই নামমাত্র বরাদ্দ আরও গুরুত্বপূর্ণ খাতে যাওয়া উচিত কি না, সেই প্রশ্ন উঠছেই।