প্রতীকী ছবি।
দেশে দৈনিক করোনা-আক্রান্তের লেখচিত্র নিম্নমুখী। ফলে বিভিন্ন রাজ্যে বিধিনিষেধ অল্প অল্প করে শিথিল করা হচ্ছে। খুলছে স্কুলের দরজাও। তবে সবই হচ্ছে করোনা-বিধিকে কঠোর ভাবে বলবৎ করে। তবে সংক্রমণের হার কিন্তু এখনও ঊর্ধ্বমুখীই। যা নিয়ে চিন্তায় সরকার।
শপিং মল, বাজারহাট, রেস্তরাঁ যদি নির্দিষ্ট নিয়মে খোলা যায়, তা হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন খোলা যাবে না। বেশ কয়েক মাস ধরেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই প্রশ্ন উঠছিল। দৈনিক সংক্রমণ নিম্নমুখী হতে বেশ কিছু রাজ্যে খুলে দেওয়া হচ্ছে ক্লাসরুম। শ্রেণিকক্ষে হাজির হয়ে স্কুল করতে শুরু করেছে পড়ুয়ারা। কোভিড-বিধি মেনে আজ থেকেই প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছে কর্নাটকের বেঙ্গালুরুতে। স্বভাবতই খুশি ছাত্রছাত্রী থেকে অভিভাবকেরা। বেঙ্গালুরুর শিবাজিনগরের সরকারি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুজাতা বলেন, ‘‘করোনা-বিধি মেনেই আজ থেকে স্কুল খোলা হল। তবে আপার কিন্ডার গার্ডেন ও লোয়ার কিন্ডার গার্ডেনের পড়ুয়াদের এখনই আসতে বারণ করা হয়েছে।’’
আগামিকাল থেকে স্কুল খুলবে মধ্যপ্রদেশেও। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে পঠনপাঠন শুরু করার সিদ্ধান্তের কথা আজ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। স্কুল খোলা নিয়ে আজ তিনি বৈঠক করেন। পড়ুয়ারা কোভিডে আক্রান্ত হতে পারে কিনা, তা নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও নেন তিনি। পরে শিবরাজ টুইট করে জানান, ১ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার থেকে রাজ্যের প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ারা স্কুলে যাবে। তবে ক্লাসে মোট পড়ুয়ার সংখ্যার অর্ধেক নিয়ে ক্লাস হবে বলে জানানো হয়েছে। আগামিকাল থেকে মহারাষ্ট্রের পুণের স্কুলগুলিও খুলে যাচ্ছে। তামিলনাড়ুতেও আগামিকাল প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া স্কুলে যেতে পারবে। তবে প্রাক-প্রাথমিক পড়ুয়াদের এখনও স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি সরকার।
গত কয়েকদিন ধরে দৈনিক সংক্রমণ কিছুটা স্তিমিত হওয়ায় ওড়িশাতেও কোভিড বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করা হচ্ছে। সরস্বতী পুজোতে পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। কিছুটা শিথিল করা হয়েছে রাত্রিকালীন কার্ফুও। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজস্থানে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য স্কুল খুলে দেওয়া হবে।
দেশে করোনা সংক্রমণের হার অবশ্য চিন্তায় রেখেছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, সংক্রমণের হার ১৪.৫০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫.৭০ শতাংশ। সম্প্রতি ফ্রন্টিয়ার্স ইন মেডিসিন নামে পত্রিকাটিতে গবেষকেরা দাবি করেছেন, করোনা আক্রান্ত কোনও রোগীকে যে ক’দিন বিচ্ছিন্নবাসে থাকতে বলা হয়, তার পরেও কিছু রোগীর শরীরে সার্স কোভ-২ ভাইরাস সক্রিয় অবস্থায় থাকতে পারে। এবং ওই রোগীর থেকে অন্যের শরীরে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কাও থাকে। তবে ওই রোগীর শরীরে সেই সময়ে করোনার উপসর্গ না-ও উপস্থিত থাকতে পারে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বরের মধ্যে ব্রাজিলের ৩৮ জন রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন বলে দাবি করেছেন ওই গবেষকেরা।
যদিও এদেশের চিকিৎসকেরা এই গবেষণাকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের মতে, মূল্যায়ন সংখ্যা অত্যন্ত কম মাত্র ৩৮। এর মধ্যে তিনটি ক্ষেত্রে ৭০ দিনের বেশি ভাইরাস শেডিং লক্ষ্য করা গেছে। ভাইরাস শেডিং চিহ্নিত হয়েছে, আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে ভাইরাস নয়, ভাইরাসের আরএনএ কে চিহ্নিত করা হয়েছে।