কনজাঙ্কটিভাইটিসের ফলে চোখ লাল হয়ে যাওয়া। —ফাইল চিত্র।
বর্ষার মরসুমে ভাইরাস ঘটিত রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়। কনজাঙ্কটিভাইটিস সে রকমই একটি রোগ। এই রোগে চোখে সংক্রমণ ঘটে। দিল্লির স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে চোখের এই সংক্রমণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন থেকে চার দিনে প্রায় প্রতিটি স্কুল থেকে গড়ে ১০ থেকে ১২ জন পড়ুয়াকে সংক্রমণের সন্দেহে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। দিল্লির এক স্কুলের শিক্ষিকা অ্যানি কোশি এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, স্কুলের যে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কনজাঙ্কটিভাইটিস দেখা দিচ্ছে তাদের বেশির ভাগই চতুর্থ থেকে সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া। পিটিআই সূত্রে খবর, সাধারণত তিন থেকে চার দিন তাদের চোখে সমস্যা থাকছে। তার পর আবার স্কুলে ফিরে আসছে ওই পড়ুয়ারা। তিনি আরও বলেন, ‘‘চোখের সংক্রমণের কারণে আমরা প্রতি দিন প্রায় ১০ থেকে ১২ জন পড়ুয়াকে স্কুল থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি। তবে তাদের মধ্যে টাইফয়েড বা অন্য কোনও রোগের উপসর্গ দেখা দেয়নি।’’
দিল্লি স্টেট পাবলিক স্কুল ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরসি জৈন জানিয়েছেন, যে পড়ুয়ারা কনজাঙ্কটিভাইটিসে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের স্কুলে না আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ সুস্থ হলে তবেই তারা স্কুলে আসতে পারবে বলে জানানো হয়েছে। কনজাঙ্কটিভাইটিসে আক্রান্ত পড়ুয়ারা দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠছে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু যে ছাত্রছাত্রীরা টাইফয়েড বা পেটের রোগে ভুগছে, তারা শারীরিক অসুস্থতার জন্য কমপক্ষে সাত দিনের ছুটি নিতে হচ্ছে।
দিল্লির এক চিকিৎসক সবিতা রথ জানিয়েছেন, কনজাঙ্কটিভাইটিস রোগ সাংঘাতিক ছোঁয়াচে। সাধারণত শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি দেখা দিচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে চোখের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। বার বার স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করা, আলাদা রুমাল বা তোয়ালে ব্যবহার করা প্রয়োজন। কালো চশমা পরা, সাঁতার না কাটা, বার বার চোখে হাত না দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
চোখের নীচের অংশ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে ব্যথা বা খচখচ করা, জল পড়া, চোখ জ্বালা করা চুলকানি এবং আলোয় কষ্ট হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা গেলেই অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দিল্লি এমসের চিকিৎসক জেএস তিতিয়াল জানিয়েছেন, কনজাঙ্কটিভাইটিসে আক্রান্ত হয়ে প্রতি দিন প্রায় ১০০ জনকে হাসপাতালে আসছেন। দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে খবর, দিল্লিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১,০৩২।
দিল্লির পাশাপাশি, কনজাঙ্কটিভাইটিসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে গুজরাত, অরুণাচল প্রদেশ এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে। বিশেষত অরুণাচল প্রদেশের স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে সংক্রমণ এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন। এমনকি, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে স্কুলগুলিকে আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী ইটানগরে ২৫ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে।