বিধানসভা ভোটে গৌতম রায়ের পরাজয়ে চিন্তায় সাহাবাদে ওই কংগ্রেস নেতার নামাঙ্কিত স্কুলের কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক, পড়ুয়া, অভিভাবকরা। প্রায় সাড়ে চারশো ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে ছড়িয়েছে আশঙ্কা।
হাইলাকান্দির কাটলিছড়া নির্বাচন কেন্দ্রের অন্তর্গত ‘গৌতম রায় মডেল হাইস্কুল’-কে এই পরিস্থিতির সামনে ফেলার জন্য গৌতমবাবুকেই দায়ী করছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইসমাইল আলি লস্কর। তাঁর বক্তব্য, দক্ষিণ হাইলাকান্দিতে শিক্ষার প্রসারে ২০০০ সালে কাটলিছড়ার সাহাবাদে ‘সাহাবাদ মডেল হাইস্কুল’ নামে একটি স্কুল তৈরি করা হয়েছিল। এক বছর পর স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য ফয়জুল হক লস্কর ও জেলার তৎকালীন শিক্ষাধিকারিক ইসহাক আলি বড়ভুঁইঞার উদ্যোগে স্কুলের নাম বদলে হয় ‘গৌতম রায় মডেল হাইস্কুল’। নাম পরিবর্তনের কারণ ছিল, তৎকালীন মন্ত্রী গৌতম রায়কে সন্মান দেখানো।
ইসমাইল আলি লস্কর জানান, বদলে শর্ত ছিল, স্কুলের জন্য আরও জমি ও ঘরের ব্যবস্থা করে দেবেন গৌতমবাবু। প্রাক্তন মন্ত্রী শর্তগুলি মেনে নিয়েছিলেন। স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের মধ্যস্থতায় কাজি আতাউর রহমান নামে এক ব্যক্তি স্কুলের জন্য জমি দান করতে রাজি হন। কয়েক লক্ষ টাকা দামের জমির পরিবর্তে মন্ত্রী গৌতম রায়ের কাছে শিক্ষিত বেকার আতাউর আর্জি (পড়ুন, শর্ত) রেখেছিলেন, তাঁকে যে কোনও সরকারি বিভাগে চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সে কথাও মেনে নিয়েছিলেন গৌতমবাবু। প্রধান শিক্ষকের দাবি, ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে জমিদাতাকে সরকারি চাকরি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিলেন গৌতমবাবু। ২০০৪ সালে স্কুলটি সরকারি অনুমোদন পায়। ২০০৯ সাল থেকে পেতে থাকে সরকারি সাহায্যও। ইসমাইল জানান, বর্তমানে এই স্কুলে কর্মীসংখ্যা ১৭। ছাত্রসংখ্যা প্রায় সাড়ে চারশো।
এ বারের ভোটে হেরেছেন গৌতমবাবু। স্কুল কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, তাতে জমিদাতা আতাউরের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে গিয়েছে।
স্কুল সূত্রে খবর, জমিদাতা আতাউর রহমান প্রধান শিক্ষকের কাছে সরকারি চাকরির পাইয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক ইসমাইল আলি লস্কর কয়েক জন সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায়ের হাইলাকান্দির বাড়িতে যান। জমিদাতাকে চাকরি দেওয়ার বিষয় তাঁরা গৌতমবাবুর মতামত জানতে চান। ইসমাইলবাবু জানান, সে কথা শুনে প্রচণ্ড রেগে যান গৌতমবাবু। তিনি জানিয়ে দেন, এ ব্যাপারে কিছু করতে পারবেন না। কারণ এলাকার মানুষ সুজামউদ্দিনকে ভোট দিয়েছেন। তাই এখন থেকে ওই স্কুল-সহ এলাকার উন্নয়নের দায়িত্ব বিধায়ক সুজামউদ্দিনের। এ কথা শুনেই আশঙ্কায় পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে গৌতমবাবুর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর ব্যাক্তিগত সচিব তথা হাইলাকান্দি জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক সঞ্জু দেব এ বিষয়ে বলেন, ‘‘ওই স্কুলের কোনও সমস্যার কথা আমার জানা নেই। শুধু শুনেছি অনেক দিন ধরে গৌতমবাবু ওই স্কুলটিকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে যাচ্ছেন।’’
গৌতমবাবুর সঙ্গে কথা বলে আসার পর প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘চাকরির ব্যবস্থা না হলে আতাউর তাঁর জমি ফেরত চাইতে পারেন।’’ তাঁর বক্তব্য, জমিদাতাকে চাকরি দিতে না পারলে স্কুলের নাম-বদলের দাবিও উঠতে পারে।
কাজি আতাউর রহমান অবশ্য এখনও এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে নারাজ। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, আরও কয়েক দিন ঘটনা পরম্পরার উপর নজর রাখার পরই তিনি প্রকাশ্যে কথা বলতে পারেন।