রাজস্থানে গরুকে বাঁচাতে মানুষ খুনের ঘটনায় এমনিতেই রাজনৈতিক আক্রমণের মুখে পড়েছিল সঙ্ঘ পরিবার তথা বিজেপি। এ বার গোরক্ষা বাহিনী নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ল বিজেপি শাসিত আধ ডজন রাজ্য।
শীর্ষ আদালত আজ প্রশ্ন তুলেছে, অবৈধ গো-হত্যা রুখতে যদি গরু পাচার নিষিদ্ধ করা হয়, তা হলে গোরক্ষার নামে যারা মানুষ খুন করছে, তাদের নিষিদ্ধ করা হবে না কেন? এই প্রশ্নের জবাব চেয়ে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং মহারাষ্ট্র— বিজেপি শাসিত এই ছ’টি রাজ্যের উদ্দেশে নোটিস জারি করেছেন বিচারপতি দীপক মিশ্রর বেঞ্চ। কেন্দ্রেরও মত জানতে চাওয়া হয়েছে এই বিষয়ে। পরের শুনানি হবে ৩ মে।
চলতি সপ্তাহেই বিজেপি-শাসিত রাজস্থানের অলওয়রে গোরক্ষকরা অবৈধ ভাবে গরু-পাচারের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারে। প্রথমে গরু পাচার রোখার নামে জাতীয় সড়কের উপরে চারটি গাড়ি আটকানো হয়। গরু কেনার কাগজ দেখানোর পরেও মারধর করা হয়। পহেলু খান নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। এই ঘটনায় নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রীদের মন্তব্যেও বেড়েছে বিতর্ক। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি দাবি করেছিলেন, এমন কিছুই ঘটেনি। অথচ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ মন্তব্য করেছেন, ওই ঘটনার তদন্ত হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।
গোরক্ষার নামে স্বঘোষিত গোরক্ষকেরা দলিত, সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচার করছেন, মানুষ খুন করছে অভিযোগ তুলে কংগ্রেস কর্মী তহসিন পুনাওয়ালা এবং তাঁর ভাই শাহজাদ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, এই সব স্বঘোষিত গোরক্ষক বাহিনীগুলিকে নিষিদ্ধ করা হোক। আজ ওই মামলার শুনানিতে তাঁর আইনজীবীরা ২০১৫ সালে উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে গোমাংস খাওয়ার অভিযোগে মহম্মদ আখলাককে পিটিয়ে মারা থেকে শুরু করে অলওয়রে খুনের ঘটনার গোটা দশেক দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। যুক্তি দেন, ‘‘তথাকথিত গোরক্ষকদের অত্যাচার দিনকে দিন এতই ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে যে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছেন।’’ এর পরেই ছয় রাজ্যকে নোটিস জারি করে সুপ্রিম কোর্ট।
আরও পড়ুন:শশিকলা-ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীর বাড়িতে আয়কর হানা
মোদী সরকার রাজ্যসভাতেও এ নিয়ে আক্রমণের মুখে পড়েছে আজ। অলওয়রে কিছুই হয়নি দাবি করার জন্য নকভির ক্ষমাপ্রার্থনা দাবি করেন কংগ্রেস নেতারা। চাপের মুখে নকভি মেনে নেন, অলওয়রে খুনের ঘটনা ঘটেছে। এফআইআরও দায়ের হয়েছে। রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে সংসদে বিবৃতিও দেবেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা নৈরাজ্য, গুন্ডাগিরি মানি না।’’ তাতে সন্তুষ্ট হননি কংগ্রেস নেতারা। নকভির বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে। মোদী সরকার অবশ্য মনে করছে, আখেরে এতে বিজেপির লাভই হচ্ছে। কারণ, আগামী বছর রাজস্থানে ভোট। সুশাসনের প্রশ্নে ভোট হলে বসুন্ধরা রাজের সামনে বিপদ। তার বদলে গরু রক্ষার নামে মেরুকরণ হলে আখেরে বিজেপির লাভই হতে পারে।