এখানেই পুড়িয়ে দেওয়া হয় নির্যাতিতার দেহ। ফাইল চিত্র।
হাথরসে কিশোরীকে নির্যাতনের পরে খুনের তদন্তে নজরদারির দায়িত্ব নিল না সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার শুনানির পরে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়েছে, এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে বিষয়টির শুনানি করছে। তদন্তে নজরদারি বা পরিচালনার দায়িত্বও তারাই নিক। সর্বোচ্চ আদালতে এ বিষয়ে আর কোনও শুনানির প্রয়োজন নেই। নির্যাতিতার পরিবার উত্তরপ্রদেশের বাইরে দিল্লিতে মামলা সরানোর আবেদন করলে সেটি বিবেচনার দায়িত্বও বেঞ্চ হাইকোর্টের উপরে ন্যস্ত করে।
এক মাস আগে উত্তরপ্রদেশের হাথরসে এক জন দলিত কিশোরীকে গণধর্ষণের দায়ে গ্রামের চার জন উচ্চবর্ণের যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিশোরী পরে দিল্লির হাসপাতালে মারা যান। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকার ধর্ষণের অভিযোগ মানছে না। গোটা ঘটনাটি তারা বিজেপি সরকারের ভাবমূর্তি ধ্বংসের জন্য বিরোধীদের চক্রান্ত বলে দাবি করছে। কার্যত আভিযুক্তদের পাশেই এসে দাঁড়িয়েছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। অভিযুক্তদের দাবির পরে রাজ্য সরকার ঘটনার তদন্ত-ভার প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা সিবিআইয়ের হাতে দিয়েছে।
ঘটনার প্রায় এক মাস পরে সিবিআই ঘটনার তদন্ত শুরু করে নির্যাতিতার বাড়ির অদূরে একটি ক্যাম্প অফিস তৈরি করেছে। এ দিন অভিযুক্ত চার জনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন সিবিআই অফিসারেরা। ১৫ জনের যে দলটি তদন্ত করছে, তার নেতৃত্বে রয়েছেন মহিলা অফিসার সীমা পাহুজা। মঙ্গলবার নির্যাতিতার বাড়ির মহিলা সদস্যদের সঙ্গে গোপনে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছেন সীমা।
আরও পড়ুন: এক বছরে ৩৬ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বেড়েছে মোদীর, কমেছে শাহের
এ দিকে তদন্তের জন্য হাথরসের জেলা হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে পায়নি সিবিআই। ১৪ সেপ্টেম্বর নির্যাতিতাকে উদ্ধারের পরে প্রথমে এই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। কী অবস্থায় তাঁকে আনা হয়েছিল, তার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ ছিল এই ফুটেজ। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পুলিশ তাঁদের সেই ফুটেজ রাখতে না-বলায় তা মুছে ফেলা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে পুরনো ফুটেজের উপরে নতুন রেকর্ডিং করা হয়। পুলিশ সংরক্ষণের নির্দেশ দিলে তবেই কোনও বিশেষ দিন ও সময়ের ফুটেজ রাখা হয়। ঘটনার এক মাস পরে তাই সেই পুরনো ফুটেজ পাওয়ার আর কোনও সম্ভাবনা নেই।
সুপ্রিম কোর্টে এ দিন হাথরস নিয়ে শুনানিতে সরকারের পক্ষে সওয়াল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার মেহতা। উত্তরপ্রদেশ সরকারের হলফনামা আদালতে পেশ করে মেহতা জানান, নির্যাতিতার পরিবারের জন্য ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। নির্যাতিতার আইনজীবী সীমা কুশওয়াহা বলেন, রাজ্য সরকার ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইছে। রাজ্য প্রশাসন যে শুধু যে ধর্ষণের ঘটনা মানছে না তা-ই নয়, পরিবারের অনুমতি ছাড়া রাতের অন্ধকারে নির্যাতিতার দেহ ডিজেল ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে উত্তরে বলেন, হাইকোর্টের বিচারপতি ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে বেশ কঠোর মন্তব্য করেছেন।
আরও পড়ুন: সরকারি খরচ বৃদ্ধির পক্ষে ফের সওয়াল
এটা যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল, সেটাও বলেছেন। নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী বলেন, তাঁরা চান সর্বোচ্চ আদালত সিবিআইয়ের তদন্তে নজরদারি করুক। সিবিআই যেন সুপ্রিম কোর্টের কাছে রিপোর্ট জমা দেয়। প্রধান বিচারপতি এই দায়িত্ব এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চের উপরেই দেন। আইনজীবী কুশওয়াহা বলেন, তদন্ত শেষ হলে মামলা যেন উত্তরপ্রদেশের বাইরে দিল্লির আদালতে চলে, সর্বোচ্চ আদালত অন্তত সেই নির্দেশটুকু দিন। প্রধান বিচারপতি বলেন, সেটাও হাইকোর্টই বিবেচনা করুক।