ফাইল চিত্র।
গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ নিয়ে তিন বার লখিমপুর খেরি কাণ্ডের তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট। আজ এই মামলায় শীর্ষ আদালতের বিচারপতিদের বক্তব্য, এক জন বিশেষ অভিযুক্তকে বাঁচাতেই লখিমপুর কাণ্ডে দু’টি এফআইআর হয়েছে। এগুলি নিয়ে তদন্ত ও সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড়ের বিষয়টি কেন আলাদা ভাবে হচ্ছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতিরা আজ যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন, ভিন্ রাজ্যের এক জন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নজরদারিতে লখিমপুরের ঘটনার তদন্ত চালাতে হবে।
লখিমপুর খেরিতে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে কৃষকদের খুন করার ঘটনা ও তার পরে হিংসার জেরে কয়েক জন বিজেপি সমর্থকের নিহত হওয়ার পরে তদন্তের গতিপ্রকৃতি যে ভাবে এগোচ্ছে, তা নিয়ে আজ প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতিরা। তাঁরা বলেছেন, ‘‘এই ঘটনায় রাজনীতির রং দেখতে চাই না। (তদন্তের) নজরদারির জন্য একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে নিয়োগ করা হোক।’’ উত্তরপ্রদেশ সরকার যে ভাবে তদন্ত করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘যতটা আশা করছিলাম, কাজ সে ভাবে এগোচ্ছে না।’’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘স্ট্যাটাস রিপোর্টে তো কিছুই নেই। শুধু জানানো হয়েছে আরও কয়েক জন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা। আপনাদের আমরা ১০ দিন সময় দিয়েছিলাম। ল্যাবের রিপোর্টও আসেনি।’’ সুপ্রিম কোর্ট যোগী সরকারকে আগেই নির্দেশ দিয়েছিল যে কত জনকে, কোন কোন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে, স্ট্যাটাস রিপোর্টে তা জানাতে হবে।
বিচারপতিরা আজ বলেন, কৃষক হত্যা ও হিংসার জেরে খুনের ঘটনা নিয়ে পরপর যে দু’টি এফআইআর হয়েছে, মনে হচ্ছে তা প্রধান অভিযুক্তকে (কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্রের পুত্র আশিস মিশ্র) রক্ষা করতেই করা হয়েছে। দু’টি ঘটনায় পৃথক ভাবে তদন্তের কাজও করা হয়নি। বিচারপতি সূর্য্য কান্ত বলেন, ‘‘আমরা দুঃখিত যে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, দু’টি এফআইআরের মাধ্যমে এক জন বিশেষ অভিযুক্তকে সুবিধা করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘কয়েক জন কৃষককে খুন করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে এক জন সাংবাদিকের নিহত হওয়া ও রাজনৈতিক কর্মীদের খুন করার ঘটনা। তবে যে ভাবে সাক্ষীদের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে প্রধান অভিযুক্তকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।’’ প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন, দু’টি এফআইআরের তদন্ত আলাদা ভাবে করতে হবে।
বিচারপতিদের সমালোচনার মুখে উত্তরপ্রদেশ সরকারের আইনজীবী হরিশ সালভে বলেন, দু’টি এফআইআরকে আলাদা ভাবে নিয়ে তদন্ত করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু দেখা গিয়েছে, একটি এফআইআর সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যখন সাক্ষীদের ডাকা হয়েছে, তাঁরা অন্য এফআইআর নিয়ে কথা বলছেন। সালভের যুক্তি, দু’টি এফআইআরের তদন্তে যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে, তা সাংবাদিক রমণ কাশ্যপের নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়েই হয়েছে। ঘটনার দিন তিনি আশিস মিশ্রদের সঙ্গে ছিলেন কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল।
বিচারপতি সূর্য্য কান্ত বলেন, ‘‘দু’টি এফআইআরে সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড়ের বিষয়টি যাতে আলাদা ভাবে এগোতে পারে, সে জন্য রোজকার তদন্তের নজরদারি করতে আমরা উত্তরপ্রদেশের বাইরের হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে নিয়োগ করতে চাইছি। আমরা চাই না তদন্তের বিষয় খতিয়ে দেখতে আপনাদের সরকার কোনও বিচারপতিকে নিয়োগ করুক।’’ সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চের অন্য সদস্য, বিচারপতি হিমা কোহলি লখিমপুর খেরির তদন্তে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিৎ সিংহ ও বিচারপতি জে রাকেশকুমার জৈনের নাম প্রস্তাব করে বলেন, ‘‘তা হলে অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতি চার্জশিট না হওয়া পর্যন্ত তদন্তের সব কিছু নজরে রাখুন।’’ এ সঙ্গেই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, লখিমপুর খেরির ঘটনা নিয়ে যোগী সরকার যে বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠন করেছে, তাতে সায় নেই শীর্ষ আদালতের।
আগের শুনানিতে বিচারপতিরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, ৩ অক্টোবরের ওই ঘটনায় মাত্র ২৩ জন সাক্ষীকে রাখা হয়েছে কেন? আরও বেশি সংখ্যায় সাক্ষী জোগাড় ও তাঁদের নিরাপত্তার উপযুক্ত ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতিরা। বিচারপতিরা আজ প্রশ্ন তোলেন, ওই দিন ঘটনাস্থলে থাকা কতগুলি মোবাইল ফোনকে চিহ্নিত করা হয়েছে? বিচারপতি হিমা কোহলি বলেন, ‘‘আপনারা শুধু আশিস মিশ্রের ফোনকেই চিহ্নিত করেছেন। অন্যদের সঙ্গে কি ফোন ছিল না?’’ সালভে বলেন, অভিযুক্তেরা যে ঘটনাস্থলে ছিল, তার প্রমাণ সিসিটিভি ফুটেজেই রয়েছে।’’ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢ়রা বলেন, ‘‘এতেই বোঝা যাচ্ছে লখিমপুর নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজন।’’