‘ব্যর্থ প্রেমিক’ সবজার আহমেদ। সংগৃহীত ছবি।
দু’জনেই উপত্যকার ‘হিরো’ ছিল। তবে একই সময়ে নয়। এক জনের মৃত্যুর পর অন্য জন। প্রথম ‘হিরো’র নাম বুরহান ওয়ানি। আর দ্বিতীয় জন? বুরহানের উত্তরসূরি সবজার আহমেদ। শনিবার পুলওয়ামার ত্রাল সেক্টরে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে গুলিযুদ্ধে মারা গেল সেই দ্বিতীয় ‘হিরো’ও। বুরহানের মৃত্যুর পর উপত্যকায় হিজবুল মুজাহিদিনের প্রধান ছিল এই সবজার। এক সময়ে সে ছিল বুরহানের ডান হাতও।
কিন্তু, সবজারের এই উত্থানের পিছনে নাকি রয়েছে এক নারীর হাত। বা বলা ভাল, এক ব্যর্থ প্রেমের উপাখ্যান। উপত্যকা জুড়ে সে গল্প এখন বেশ প্রচলিত। কাশ্মীরেরই এক গড়পড়তা মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা সবজারের। একটা সময়ে তার জীবনে প্রেমও আসে। আর সেই প্রেমই তাকে টেনে আনে জঙ্গি-জীবনে।
কী ভাবে?
উপত্যকায় উড়ছে, এক তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় সবজারের। কিন্তু, সেই প্রেম নাকি টেকেনি। কারণ, ওই তরুণীর পরিবার। সবজারের মতো ছেলের সঙ্গে কোনও ভাবেই তারা মেয়ের ওই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি। মেয়েও পরিবারের বিরুদ্ধে বেশি দূর এগোতে পারেনি। কাজেই পরিবারের চাপে একটা সময়ে প্রেমিকা ফিরিয়ে দেয় সবজারের দেওয়া বিয়ের প্রস্তাব। এর পরেই সম্পর্কের ইতি। সম্পর্ক শেষের এই ঘটনার পর পরই সবজারের জীবনে রাষ্ট্রবিরোধী কাজের শুরু। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে সে হাত পাকাতে শুরু করে নানা গর্হিত কাজে।
আরও পড়ুন: বুরহানের উত্তরসূরিও সেনা অভিযানে খতম, প্রতিবাদে উত্তাল কাশ্মীর
এই সময়েই পুরনো আর এক সম্পর্ক ঝালিয়ে নেয় সবজার। তার ছোটবেলার বন্ধু বুরহান ওয়ানি। কাশ্মীরের সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবারের ওই সুদর্শন তরুণও তখন বিপথগামী। হিজবুলের কুখ্যাত কম্যান্ডারদের সঙ্গে পাহাড়ে-জঙ্গলে দিন কাটছে কেমন— ফেসবুকে নিয়মিত ভেসে উঠছে সেই ছবি। দলে নাম লেখাল সবজারও। গত বছর ৮ জুলাই সেনা অভিযানে বুরহানের মৃত্যুর পর হিজবুলের হাল ধরে সে। বুরহানের উত্তরসূরি হিসেবে ওই জঙ্গি সংগঠনের দায়িত্বে তখন জাকির রশিদ ওরফে জাকির মুসার হাতে। ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সবজার। আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা না করলেও মুসার দলত্যাগের পর হিজবুল মুজাহিদিনের অন্যতম প্রধানই ছিল এই সবজার আহমেদ। নতুন নাম হল ‘সব ডন’।
বুরহানের সঙ্গে প্রায় দু’বছর কাজ করেছিল সবজার। ভারতেই নানা জঙ্গি কার্যকলাপে প্রশিক্ষণ নেয় সে। হিজবুলের যাবতীয় তথ্য ছিল তার নখদর্পনে। তার মাথার দাম ১০ লক্ষ টাকা ঘোষণা করা হয়। সেনা সূত্রে খবর, চলতি বছরের মার্চ মাসে ত্রালের একটি গোপন ডেরা থেকে নিরাপত্তাবাহিনীদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যায় সে। পুঞ্চে নিরাপত্তাবাহিনীর উপর একাধিক বার জঙ্গি হানা ছাড়াও ভারতীয় চর সন্দেহে বেশ কয়েক জন কাশ্মীরিকে হত্যাও করে ‘সব ডন’।
তবে, সব কিছু ছাড়িয়ে সবজারের মৃত্যুর পর উপত্যকা জুড়ে তার ব্যর্থ প্রেম কাহিনিই উড়ে বেড়াচ্ছে।