শবরীমালা-বিতর্কে সর্বোচ্চ আদালতেরই সংশয় দেখে হতাশ কনকদুর্গা ও বিন্দু।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলীয়ান হয়ে নানা বাধা-বিপত্তি, বিক্ষোভের ঝড়-ঝঞ্ঝা পেরিয়ে শবরীমালা মন্দিরের চৌকাঠ পেরিয়েছিলেন ওঁরা দু’জন। আয়াপ্পা দর্শনে তাঁরাই প্রথম মহিলা মুখ। বছর ঘুরে সেই সর্বোচ্চ আদালতেরই সংশয় দেখে হতাশ বিন্দু ও কনকদুর্গা। বৃহত্তর বেঞ্চের কাছে শবরীমালা-বিতর্কের ভার অর্পণ করার সিদ্ধান্তকে ‘রাজনৈতিক বিচার’ বলেই মনে করছেন তাঁরা।
কোঝিকোড়ের বিন্দু রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশি চৌখস। অভিজ্ঞতাও বেশি। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার শবরীমালা রায়ের পুনর্বিবেচনার আবেদন ৭ সদস্যের বেঞ্চের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার পরে আনন্দবাজারের তরফে যোগাযোগ করা হলে বিন্দু সরাসরিই বলছেন, ‘‘এটা রাজনৈতিক বিচার হল! সব ধর্মই তো সব মানুষের, নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলেছে। সেই মর্মার্থ মাথায় রেখেই সুপ্রিম কোর্ট গত বছর শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছিল। এখন আবার পুরনো সংস্কার ধরে রাখার জন্য এত ভাবতে হচ্ছে!’’ তাঁর যুক্তি, মহিলা ভক্তদের আয়াপ্পা দর্শনের সুযোগ দেওয়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমে কারা কেরলে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, সে দিকে নজর দিলেই নতুন করে ভাবনার নেপথ্যে ‘রাজনীতি’ বুঝতে পারা যায়।
সর্বোচ্চ আদালতের রায় যতই পক্ষে থাক, শবরীমালার পরম্পরা ভাঙার দায়ে পরিবার-পরিজনেরও রোষের মুখে পড়তে হয়েছিল কনকদুর্গাকে। এখন আবার ফিরেছেন মলপ্পুরম জেলার আপ্পাডিপুরমের বাড়িতে। সেখান থেকেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘আগের রায়ের বিরুদ্ধে ওঠা আপত্তি সুপ্রিম কোর্ট নাকচ করে দিলেই খুশি হতাম!’’ বিন্দুর মতোই কনকদুর্গার মত, মন্দিরে দেব দর্শনের অধিকার ইচ্ছুক মহিলাদেরও থাকা উচিত। ঋতুমতী বলে তাঁদের দূরে সরিয়ে রাখার কোনও গ্রহণযোগ্য যুক্তি নেই।
বিন্দু-কনকদুর্গাদের একেবারে বিপরীত অবস্থানে ছিল গেরুয়া শিবির। শবরী-বিক্ষোভের জেরে কেরলে লোকসভা নির্বাচন বা কোনও উপনির্বাচনে সুবিধা করতে না পারলেও সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের সিদ্ধান্তে খুশি বিজেপি। দলের নেতা কুম্মানম রাজশেখরনের বক্তব্য, ‘‘বোঝা গেল, আদালতের আগের রায়ে কিছু ভুল-ভ্রান্তি ছিল। শবরীমালায় আয়াপ্পা দর্শন-পর্ব আবার শুরু হচ্ছে দু’দিনের মধ্যে। রাজ্য সরকারের উচিত, ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সের কোনও মহিলা মন্দিরে ঢুকতে চাইলে তাঁদের আটকানো।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, একই দাবি করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের রমেশ চেন্নিথালাও! তাঁরও দাবি, মহিলা ভক্তদের এখন থেকেই আটকে দিক রাজ্য সরকার। যদিও নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী তৃপ্তি দেশাই ফের শবরীমালা অভিযানে যাওয়ার কথা বলেছেন।
আরও পড়ুন: শবরী-দ্বন্দ্বে ভিন্ ধর্মের বৈষম্য
আরও পড়ুন: নির্দেশ নয়, তবে হতেই পারে তদন্ত, সুপ্রিম কোর্টের রাফাল-রায়ে চাঙ্গা দু’পক্ষই
বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন অবশ্য মন্তব্য করেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট তো আগের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়নি! তবে তারা যা বলেছে, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে বেশ বিভ্রান্তিকর।’’ সুপ্রিম কোর্টের যে দুই বিচারপতি ‘সংখ্যালঘু রায়’ দিয়েছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সরকার আদালতের নির্দেশ কার্যকর করেছিল মাত্র। এখন মহিলা ভক্তদের নিয়ে তাঁরা কী করবেন, সে বিষয়ে আইনি মত নেওয়া হবে।