এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র।
ইসলামাবাদের 'জিন্না কনভেনশন সেন্টার'-এ আগামিকাল সকালে এসসিওভুক্ত রাষ্ট্রগুলির সরকারি নেতৃত্বের বৈঠকে একাধিক কূটনৈতিক লক্ষ্য রয়েছে নয়াদিল্লির। প্রথমত, মধ্য এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত সংযোগকে পোক্ত করার জন্য এই বহুপাক্ষিক মঞ্চকে আগামিকাল ব্যবহার করবেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পাশাপাশি, বিশ্বের দক্ষিণ প্রান্তিক গরিব রাষ্ট্রগুলির নেতৃত্বের দাবিকেও জোরালো ভাবে তুলবেন তিনি। একই সঙ্গে যুদ্ধবিরোধী বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত নিরসনের সূত্রের কথা বলবেন।
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, এই এসসিও গোষ্ঠীর বিশেষত্ব হল, ব্রিকস-এর মতোই এখানে চিন রয়েছে প্রতিস্পর্ধী হিসাবে। রয়েছে রাশিয়া, পাকিস্তান-সহ মধ্য এশিয়ার দেশগুলি। এসসিও অঞ্চলে বেশ কিছু আর্থসামাজিক উদ্যোগের কারণে বেজিং যেমন আধিপত্য তৈরির চেষ্টা করছে, নয়াদিল্লিও চাইছে ডিজিটাল গণ পরিকাঠামো, অর্থ-প্রযুক্তিক্ষেত্র, স্বাস্থ্য পরিষেবা, নতুন উদ্যোগে নিজেদের পারদর্শিতার বিপণন করে প্রভাব বাড়াতে।
গরিব দেশগুলির (গ্লোবাল সাউথ) সঙ্কট এবং অগ্রাধিকারকেও তুলে ধরবেন জয়শঙ্কর। সরব হবেন খাদ্য, জ্বালানি ও সারের নিরাপত্তা নিয়ে। পাশাপাশি ইউরেশিয়া এবং ভারতের সঙ্গে সংযোগপথগুলিতে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী পাকাপোক্ত নীতি প্রণয়ন নিয়েও বিদেশমন্ত্রী সরব হবেন বলে জানা গিয়েছে।
২০০৫ সালে এসসিও-র পরিদর্শক রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য হওয়ার পর থেকেই ভারত এই গোষ্ঠীর মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে নিয়মিত অংশ নিতে শুরু করে। ইউরেশীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে স্বর তোলে। এ বার ইসলামাবাদের সম্মেলনে বিদেশমন্ত্রীর যোগ দেওয়ার মাধ্যমে ভারত এই বার্তাই স্পষ্ট করেছে, আঞ্চলিক সুস্থিতি, বাণিজ্যিক সহযোগিতা এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের প্রশ্নে দৃষ্টান্তমূলক প্রতিনিধিত্ব করতে চায় তারা।
যেহেতু এই সম্মেলনের আয়োজক দেশ এ বার পাকিস্তান, তাই ভারত-পাকিস্তানের প্রতিটি গতিবিধির উপরেই নজর থাকবে আগামী ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু এটাও মনে রাখছে কূটনৈতিক মহল যে, সম্মেলনে থাকছেন চিনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াং-ও। গত পাঁচ বছর ধরে সীমান্তে বসে রয়েছে লাল ফৌজ। বারবার কূটনৈতিক ও সামরিক আলোচনাতেও জট সম্পূর্ণ কাটেনি। সম্প্রতি বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘চিনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক নয়।’’ এসসিও-র মঞ্চে দু’তরফের মধ্যে পরোক্ষ বার্তা বিনিময় হয় কি না, নজর থাকবে সে দিকেও। আজই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চিন প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে খবর। জানা গিয়েছে, স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য লাদাখে গিয়ে পরিস্থিতি দেখতে চেয়েছেন। প্রসঙ্গত, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই কমিটির সদস্য।