বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ফাইল চিত্র।
ব্রিটেনে ঋষি সুনক জমানা শুরু হওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরেই ভারতে আসছেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি। অবশ্য সেটি দ্বিপাক্ষিক সফর নয়। ২৮ তারিখ থেকে যথাক্রমে মুম্বই এবং দিল্লিতে বসছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাস বিরোধী কমিটির বৈঠক। সেখানে যোগ দিতেই আসছেন তিনি। কিন্তু ভারত এবং ব্রিটেনের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দরকষাকষি যখন তুঙ্গে, তখন এই সফরকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর দীপাবলির সময়-রেখার পর এই চুক্তি সইয়ের পরের লক্ষ্যমাত্রা চলতি বছরের ডিসেম্বর। যদিও এখনও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে জটিলতা রয়েই গিয়েছে বলে খবর।
আজ ফোনে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেছেন ক্লেভারলি। এ প্রসঙ্গে কোনও সরকারি বিবৃতি দেওয়া হয়নি ঠিকই কিন্তু জয়শঙ্কর টুইট করে জানান, ব্রিটিশ সচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কট, সন্ত্রাস-মোকাবিলা, ভারত-ব্রিটেন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে। ক্লেভারলি অবশ্য তাঁর টুইটে অনেক স্পষ্ট ভাবে রাশিয়াকে নিশানা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমরা রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করেছি। রাশিয়ার বাগাড়ম্বর এবং অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে ব্রিটেন।” রাশিয়া নিয়ে বিশদ হতে দেখা যায়নি ভারতের মন্ত্রীকে।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, জয়শঙ্কর এবং ক্লেভারলির মধ্যে আলোচনায় অগ্রাধিকার পেয়েছে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে চলতি দরকষাকষি। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, ঋষি সুনকের মতোই ক্লেভারলিও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও পোক্ত করার পক্ষপাতী। তিনি বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত রূপায়ণে উদ্যোগীও বটে। গত মাসেই তিনি বলেছিলেন, “আমরা ভারতের সঙ্গে আরও শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্ক চাইছি।” পাশাপাশি নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালেক্স ইলিসের বক্তব্য, “ব্রিটেনে বড় বিনিয়োগকারী ভারত। আবার ব্রিটেনেরও অনেক বিনিয়োগ রয়েছে ভারতে। ২০৩০-এর মধ্যে আমরা বাণিজ্য দ্বিগুণ করতে চাই। তা করার পথে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি চমৎকার পথ। এই চুক্তির শীর্ষে পৌঁছতে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হয়। আমরা সমতলে হেঁটে উপত্যকায় এসেছি। পৌঁছেছি বেস ক্যাম্প-এ। এ বার সংক্ষিপ্ত কিন্তু খুবই খাড়াই উঠতে হবে। আমার ধারণা, দু’টি দেশই শীর্ষে পৌঁছনোর জন্য বদ্ধপরিকর। এক বছর ধরে এই নিয়ে আলোচনা চলছে। চুক্তি সম্পন্ন হলে দু’দেশেরই কর্মসংস্থান এবং আর্থিক বৃদ্ধি বাড়বে।”
বরিস জনসন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন গত বছর মে মাসে একটি ভিডিয়ো সম্মেলনে ভারত এবং ব্রিটেনের মধ্যে পথনির্দেশিকা-২০৩০ ঘোষণা করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। তার মূল ভিতই ছিল মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি। এই বছরের এপ্রিলে জনসনের ভারত সফরে সেই উদ্যোগ আরও জোরদার হয়। তখনই জনসন দীপাবলির মধ্যে এই চুক্তি রূপায়ণের সময়-রেখা ঘোষণা করেছিলেন।
চলতি বছরের গোড়ায় সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে একটি বড় মাপের অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি করেছে ভারত। কাছাকাছি সময়ে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি সই করেছে নয়াদিল্লি। এই চুক্তি অনুসারে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে শুল্ক ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে রাজি হয়েছে ভারত। একই সঙ্গে ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন করা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক হয়ে এগোতে চাইছে মোদী সরকার। সম্প্রতি নীতি আয়োগ জানিয়েছে, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির কারণে ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বেড়েছে ঠিকই কিন্তু রফতানি এবং আমদানির ক্ষেত্রে ফারাক কমেনি। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমেনি। ব্রিটেনের সঙ্গে তাই আঁটঘাট বেঁধে এগোনো হচ্ছে।
সুনককে চিঠি সনিয়ার ব্রিটেনের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনককে অভিনন্দন জানালেন সনিয়া গান্ধী। সুনককে পাঠানো চিঠিতে সনিয়া বলেন, ‘‘আপনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় আমি খুবই খুশি। ভারতবাসীর জন্য এর গুরুত্ব অনেক। ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ক সব সময়েই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস , আপনার জমানায় তা আরও দৃঢ় হবে।’’