এক মঞ্চে: এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে মোদী। ছবি: পিটিআই।
গত বছর সমরখন্দে এসসিও শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুখোমুখি বসা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বলেছিলেন, ‘‘এটা যুদ্ধের সময় নয়। খাদ্য, জ্বালানি, সার সঙ্কটের বিরুদ্ধে মোকাবিলার করার সময়।’’ তাঁর সেই মন্তব্যকে সাধুবাদ জানিয়েছিল পশ্চিমি বিশ্ব। আজ নয়াদিল্লির এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে কিন্তু রীতিমতো যুদ্ধং দেহি ভূমিকাতেই অবতীর্ণ হলেন পুতিন। বেজিং তাঁর পাশে রইল ছায়ার মতো। কূটনৈতিক মহল বলছে, বাস্তব তো বদলায়নি কিছু। বরং অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অবশ্য আজও বলেছেন, “আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এখন এক বড় বাঁক বদলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সংঘাত, অতিমারি, খাদ্য, সার, জ্বালানি সঙ্কট সভ্যতাকে এক বড় সমস্যার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এসসিও-কে একটি সংগঠন হিসাবে লড়তে হবে।” কূটনৈতিক শিবিরের মতে, আপ্তবাক্য হিসাবে এ কথা দামি। যেমন ছিল গত বার সমরখন্দে বহুচর্চিত বাক্যটিও। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভিজছে না। আজ বৈঠকে উপস্থিত পুতিনের থেকে যুদ্ধবিরতির সামান্য ইঙ্গিতও মেলেনি। বরং আমেরিকা তথা পশ্চিমি বিশ্বের বিরুদ্ধে এক হাত নেওয়ার জন্যই এসসিও-র মঞ্চকে পুতিন আজ ব্যবহার করেছেন।
সম্প্রতি ভাড়াটে সেনার ‘অভ্যুত্থান’ ঘিরে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল পুতিনকে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি তখন খোঁচা মেরে বলেছিলেন, পুতিনের প্রতাপ কমছে! তার পর এই প্রথম আন্তর্জাতিক মঞ্চে বক্তব্য রাখতে দেখা গেল পুতিনকে। বলতে শোনা গেল, ‘‘রাশিয়া নিজের জায়গায় স্থির। পশ্চিমি শক্তিই ব্যর্থ।” অর্থাৎ যুদ্ধ থামার আশু সম্ভাবনা যে নেই, তা এক প্রকার স্পষ্টই হয়ে গেল তাঁর কথায়। রীতিমতো গর্জে উঠে পুতিন জানিয়ে দিলেন, পশ্চিমি দেশগুলির চাপিয়ে দেওয়া নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে যাবে মস্কো।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে বার্তা দেয়নি চিনও। চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শুধু বলেন, “উত্তপ্ত আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতির রাজনৈতিক সমাধান এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার বাঁধ মজবুত করতে চায় চিন।” সেই সঙ্গে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর (আমেরিকার পক্ষ থেকে রাশিয়ার উপর) বিরোধিতা করে রাশিয়ার হাতই মজবুত করতে চেয়েছেন শি। আমেরিকাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, “শক্তি প্রদর্শনের রাজনীতি এবং একচেটিয়াবাদের বিরোধিতা করছি আমরা।” তবে প্রধানমন্ত্রী মোদী যখন চিনের আগ্রাসনের প্রসঙ্গ তুলেছেন, তার কোনও উত্তর কিন্তু শি দেননি। ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব নষ্ট করার চক্রান্তের কঠোর সমালোচনা আজ করেছেন মোদী। গালওয়ান-কাণ্ডের কথা সরাসরি না বলে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন সীমান্তে আগ্রাসনের নীতি না প্রত্যাহার করলে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না।