ফাইল চিত্র।
চিনের প্রবল চাপ সত্ত্বেও কাশ্মীর প্রশ্নে ভারতের পাশেই রইল রাশিয়া। গত সপ্তাহে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকের পরে রবিবার একটি বিবৃতি দিয়েছে মস্কো। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কাশ্মীর প্রশ্নে কোনও তৃতীয় দেশের হস্তক্ষেপ চায় না রাশিয়া। কাশ্মীর সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি এবং ১৯৯৯ লাহোর ঘোষণার মধ্যে থেকেই।
নিঃসন্দেহে গোটা বিষয়টিকে নিজেদের সাফল্য হিসাবেই দেখাতে চাইছে সাউথ ব্লক। ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলা বেজিং এবং ইসলামাবাদের অক্ষ, ভারতের বিদেশনীতির প্রশ্নে খুবই বড় চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে লোকসভায় তাঁর বক্তৃতায় নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। যা সামলাতে গিয়ে মন্ত্রিসভার অনেকেই প্রতিআক্রমণে নেমে আসলে রাহুলের বক্তব্যের গুরুত্বই বাড়িয়ে দিয়েছেন। পূর্ব লাদাখে চিনা সেনার ভারতীয় ভূখণ্ডের ভিতরে ঢুকে এসে গত বছর দুয়েক ধরে থানা গেড়ে বসে থাকায় চাপ আরও বেড়েছে মোদী সরকারের। বিশ্লেষকদের মতে, শীত শেষ হওয়ার মুখে। বরফ গললে, সীমান্তে আবার সক্রিয় হবে পাক মদতপ্রাপ্ত জঙ্গি সংগঠনগুলি। চিনের পুরোদস্তুর মদত থাকবে সেখানে। এমতাবস্থায়, কাশ্মীর নিয়ে চিনের সঙ্গে রাশিয়ার মতো দেশের মতপার্থক্য নয়াদিল্লির জন্য কার্যকরী। চিনকে প্রভাবিত করতে রাশিয়ার বড় ভূমিকা রয়েছে বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে।
পাকিস্তানকে মদত দিতে চিন ধারাবাহিক ভাবে কাশ্মীর সমস্যার আন্তর্জাতিকরণ করতে সক্রিয়। তারা চায় বিষয়টিকে রাষ্ট্রপুঞ্জে নিয়ে যেতে। সূত্রের মতে, এই নিয়ে রাশিয়ার উপর চাপও তৈরি করা হয়েছিল শি জিনপিংয়ের পক্ষ থেকে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমেরিকার মোকাবিলা করতে বেজিং-মস্কো ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও চিনের হাতে তামাক না খেয়ে কাশ্মীর প্রশ্নে রাশিয়া কেন ভারতের পাশে দাঁড়াল, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কোনও একটি নয়, একাধিক কারণ রয়েছে মস্কোর এমন সিদ্ধান্তের। চলতি রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে ভারত এখনও পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধেগিয়ে আমেরিকার পক্ষ নেয়নি। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে নয়াদিল্লি জানিয়ে দিয়েছে, তারা ভোটাভুটিতে অংশ নেবে না। বরং গঠনমূলক কূটনীতির পথে হেঁটে বিশ্বশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিবৃতি
নিরাপত্তা পরিষদে দিয়েছে। ফলে তার বিনিময়ে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে কৌশলগত মৈত্রী আশা করতেই পারে। তাই কাশ্মীর নিয়ে রাশিয়া ভারতের পাশেই দাঁড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এই একটি কারণই নয়। বহু কূটনৈতিক প্রয়াসের পর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞায় প্রলেপ দিয়ে ভারত বিপুল অর্থের এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ
সরঞ্জাম কিনছে রাশিয়ার কাছ থেকে। ভারত একটি বড় অস্ত্র বাজার
রাশিয়ার কাছে, যা তারা কোনও মূল্যেই হারাতে রাজি নয়। পাশাপাশি আমেরিকার সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে লড়াই চালাতে গেলে ভারতের মতো দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা প্রয়োজন বলেও মনে করে মস্কো।