দলিত টানতে আলিঙ্গনই ভাগবত-মন্ত্র

জাতিভেদ ভুলে গোটা হিন্দু সমাজকে আরএসএসের ছাতায় এনে একজোট করার ডাক দিলেন সঙ্ঘ-প্রধান মোহন ভাগবত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪১
Share:

সঙ্ঘ-প্রধান মোহন ভাগবত।

কেন্দ্রে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শাসক শিবিরের উপরে ক্ষোভ বাড়ছে দলিত সমাজের। লোকসভা ভোটের আগের বছরে এসে সেই ক্ষোভ কমাতে আসরে নামল সঙ্ঘ পরিবার। জাতিভেদ ভুলে গোটা হিন্দু সমাজকে আরএসএসের ছাতায় এনে একজোট করার ডাক দিলেন সঙ্ঘ-প্রধান মোহন ভাগবত।

Advertisement

কী ভাবে তা সম্ভব হবে? মেরঠের রাষ্ট্রোদয় সম্মেলনে আজ সেই পথও বাতলে দিয়েছেন সঙ্ঘ-প্রধান। বুঝিয়ে দিয়েছেন, হিন্দুত্ব ও জাতীয়তাবাদের জোড়া মন্ত্রে তিনি এক সূত্রে গাঁথতে চান সব দলিতকে। ভাগবতের কথায়, ‘‘যাঁরাই ভারতমাতাকে মানেন তাঁরাই হিন্দু। সব হিন্দুকে নিজেদের ভাই বলে ভাবতে হবে। তাঁদের আলিঙ্গন করতে হবে।’’

রাজনৈতিক কৌশলটি স্পষ্ট। সঙ্ঘ পরিবার মনে করছে, জাতপাতের ভিত্তিতে সংঘর্ষ চালু রাখতে নিয়মিত উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। পরিকল্পিত ভাবে বিভাজনের রাজনীতি করা হচ্ছে। ভাগবতের মতে, এই বিভাজনের রাজনৈতিক ফায়দা নিচ্ছে অন্যেরা। দলিতেরা বিজেপির পাশ থেকে সরে যাচ্ছে। তাই রাহুল গাঁধী ও মায়াবতীর শিবির থেকে দলিত ভোটকে ফের হিন্দুত্বের ছাতার তলায় নিয়ে আসতে এখন থেকেই ঝাঁপাতে চাইছে সঙ্ঘ।

Advertisement

আরও পড়ুন: চৌকিদার তো চুপই: রাহুল

কারণ, গুজরাতের উনাই হোক বা মহারাষ্ট্রের পুণে, কিংবা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ— মোদী জমানায় দলিত নিগ্রহের প্রতিটি ঘটনায় আঙুল উঠেছে শাসক শিবিরের দিকে। সঙ্ঘ পরিবার বুঝতে পারছে, কৃষক-সহ গ্রামের মানুষ ও দলিতেরা ক্রমেই বিজেপি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ২০১৪-র ভোটে যে দলিত সমাজ নরেন্দ্র মোদীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল, তাদের একটি বড় অংশ মুখ ফেরাতে শুরু করেছে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে। যোগী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজপুত-দলিত সংঘর্ষে বার বার রক্তাক্ত হয়েছে রাজ্যের পশ্চিম ভাগ। দলিতদের কাছে টানার বার্তা দিতে তাই পশ্চিম-উত্তরপ্রদেশের মেরঠকেই এই রাষ্ট্রোদয় সম্মেলনের জন্য বেছে নেয় আরএসএস।

সম্মেলনে সঙ্ঘের বিস্তারে বিশেষ জোর দেন সরসঙ্ঘচালক। ‘বিবিধতার মধ্যেই ঐক্য রয়েছে ভারতে’— এই কথা বলার পাশাপাশি তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘হিন্দুদের এক হতে হবে। কেবল হিতৈষী হওয়াই যথেষ্ট নয়, সকলকে আরএসএসে যোগ দিতে হবে।’’ দলিতদের টানতে ও সঙ্ঘের প্রসারে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের প্রতিটি গ্রামে অন্তত এক জন করে সঙ্ঘকর্মী নিয়োগে জোর দিচ্ছেন ভাগবতেরা।

দলিত সমাজের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিতে গিয়ে ভাগবত আজ দেবত্বের উপরে ঠাঁই দিয়েছেন মানবতাকে। তাঁর যুক্তি, ‘‘দেবতারাও দুর্বলকে ছাড়ে না। তারাও ঘোড়া, হাতি আর ছাগলের মধ্যে শেষটিকে বলি দেওয়ার পক্ষে। কারণ সে দুর্বল। কিন্তু প্রকৃত মানুষ দুর্বলকে রক্ষা করে। সেটাই মানবিকতা। হিন্দু ধর্মও চিরকাল দুর্বলকে রক্ষা করে এসেছে। মনে রাখতে হবে কট্টর হিন্দুত্ব হল উদারতা। কট্টর হিন্দুত্ব মানে হল অহিংসা।’’

সঙ্ঘ সূত্রের বক্তব্য, দেশের বিভিন্ন অংশে যে দলিতদের উপর নিগ্রহ-অত্যাচার হচ্ছে তা রুখতেই এ দিনের সমাবেশ থেকে অহিংসার ওই বার্তা দিলেন ভাগবত। মেরঠের ওই সভায় তিন লক্ষ স্বেচ্ছাসেবক নথিভুক্ত হলেও, সূত্রের খবর স্বেচ্ছাসেবকের পোশাকে হাজির ছিলেন দেড় লক্ষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement