আরও এক বার সঙ্ঘের অসন্তোষের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উপলক্ষ, তাঁরই আমলে তৈরি হওয়া ‘নীতি আয়োগ’।
সঙ্ঘের শাখা ‘স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ’ মনে করছে, পথ হারিয়েছে নীতি আয়োগ। না তারা মানুষের কথা শুনছে, না যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে রাজ্যের মন বুঝছে। কাজ করছে সেই কর্পোরেট কায়দাতেই। এই বিষয়টিকে সামনে আনতে আগামী ১০ জানুয়ারি দিল্লিতে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছে সঙ্ঘের শাখাটি। সেখানে যোজনা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য অভিজিৎ সেনদের যেমন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তেমনই ডাক পেয়েছেন যশবন্ত সিন্হা, মুরলীমনোহর জোশীর মতো বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতারাও।
স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজনের মতে, আগে যোজনা কমিশন যে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিত, তা মানতে হতো রাজ্যগুলিকে। সেই রীতির বদল ঘটাতেই নীতি আয়োগ গঠন হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল রাজ্যগুলির পরামর্শ নিয়ে এগোনো। নিচু তলা থেকে মানুষের মতামত জেনে নীতি নির্ধারণে সাহায্য করা। কিন্তু সেই কাজটিই হচ্ছে না। তাই এ নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য, কৃষি, দারিদ্র দূরীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে নীতি আয়োগ গত প্রায় দু’বছরে কী কী কাজ করেছে, জানুয়ারির সম্মেলনে তারই চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। আয়োগের কাজ নিয়ে এমন বিশ্লেষণ এই প্রথম।
নোট-বাতিলের পর থেকে রাহুল গাঁধী-সহ বিরোধী নেতারা যে ভাবে উত্তরোত্তর আক্রমণাত্মক হচ্ছেন, তা সামাল দিতে এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছেন মোদী। ঘরোয়া আলোচনায় অনেকে বলছেন, মোদী প্যাঁচে পড়েছেন দেখেই শাখা সংগঠনগুলিকে সামনে রেখে এ ভাবে চাপ বাড়াতে শুরু করেছে সঙ্ঘ। এই স্বদেশি জাগরণ মঞ্চই ক’দিন আগে একটি মোবাইল ওয়ালেট সংস্থা সম্পর্কে আপত্তি জানিয়েছিল। নীতি আয়োগ নিয়ে বৈঠকেও তারা এমন ব্যক্তিদের বেছেছে, যাঁদের সিংহভাগ মোদী-বিরোধী।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে যোজনা কমিশনের প্রাক্তন ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেছেন, তিনি জানেনই না, নীতি আয়োগ ঠিক কী ভাবে কাজ করে। কমিশনের প্রাক্তন সদস্য অভিজিৎ সেনের মতে, যোজনা কমিশন থেকে নীতি আয়োগে রূপান্তরের সময়েই পরিকল্পনা, বাজেটের অনেকটা তৈরি করে ফেলা, রাজ্যকে অনুদান দেওয়ার মতো অধিকারগুলি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এখন কী যে করতে চায়, সম্ভবত নিজেরাই জানে না। গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে কিছু কথাবার্তা শুরু হয়েছিল। তা-ও বন্ধ। অবশ্য অতীতে জাতীয় উন্নয়ন পর্ষদের মাধ্যমে এ ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করা হতো। ফলে এতে নতুনত্ব খুব বেশি নেই।
এই বিষয়ে নীতি আয়োগের সদস্য বিবেক দেবরায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর কোনও মতামত পাওয়া যায়নি। সঙ্ঘ কিন্তু নীতি আয়োগের কাজকর্ম নিয়ে অসন্তোষকেই পুঁজি করতে চাইছে। অশ্বিনী মহাজনের মতে, জেনেটিকালি মডিফাইড (জিএম) শস্য নিয়ে নীতি আয়োগ রাজ্যগুলির মতামতকেই অগ্রাহ্য করেই একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কেরল, বিহার, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলি সরাসরি এর বিরোধিতা করেছে। অথচ নীতি আয়োগ তার তোয়াক্কা করছে না। এ রকম ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত আছে। জানুয়ারিতে দু’বছরে পা দেবে আয়োগ। এখনই তাকে সঠিক লক্ষ্যে চালিত করা প্রয়োজন।