বৈঠকে অসমের দুই মন্ত্রী। লায়লাপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
অসমের লায়লাপুরে অবরোধ উঠল। শনিবার রাত ন’টা থেকে ফের মিজোরামের দিকে যেতে শুরু করেছে জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক। দুই রাজ্যের সরকার সীমানায় শান্তি ফেরানোর অঙ্গীকার করলেও অসমের দিকে অর্থনৈতিক অবরোধ উঠছিল না। বরং গত রাতে ধলাইতে মিজোরামমুখী ডিমবাহী চারটি গাড়িতে চলল আক্রমণ। তার আগে, হাইলাকান্দিতে মিজোরামমুখী পিক-আপ ভ্যান অবরোধমুক্ত করতে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষও হয়। পরিস্থিতি সামলাতে গত রাতে বরাকের ১৪ জন বিধায়কের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। মানুষকে বুঝিয়ে, অর্থনৈতিক অবরোধ ওঠানো ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আজ লায়লাপুর পৌঁছন মন্ত্রী পরিমল শুক্ল বৈদ্য ও অশোক সিঙ্ঘল। মিজোরাম সরকারের অভিযোগ ছিল, অসম অবরোধ না তোলায় করোনার জীবনদায়ী ওষুধ ঢুকছে না রাজ্যে। ফলে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। অবশেষে আজকের আলোচনার ভিত্তিতে উঠে গেল অবরোধ।
পুলিশ জানায়, গত কাল রাতে ধলাই থেকে মিজোরামের দিকে ডিম নিয়ে যাচ্ছিল চারটি পিক-আপ গাড়ি। ভাগা বাজার এলাকায় গাড়িগুলি থামিয়ে দেয় জনতা। সব ডিম রাস্তায় ফেলে ভেঙে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় গাড়িও। জনতার দাবি ছিল, সরকার যা-ই বলুক, মিজোরামে কোনও সামগ্রী পাঠানো চলবে না। হাইলাকান্দির ধলাছরা এলাকায় সুরা বহনকারী পিক-আপ ট্রাক আটকে দেয় জনতা। পুলিশ গাড়ি ছাড়াতে গেলে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি সামলাতে শূন্য গুলি চালায় পুলিশ। হয় লাঠিচার্জ।
মিজোরামের জীবনরেখা, ৩০৬ নম্বর জাতীয় সড়কে অঘোষিত অবরোধ উঠল ১৩ দিনের মাথায়। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা স্থানীয় সংগঠনগুলির কাছে মিজোরামমুখী গাড়ি ফের চলাচল করতে দেওয়ার অনুরোধ রাখেন। তিনি বলেন, “অসমের ছয় জওয়ানের প্রাণহানি খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। কিন্তু আমাদের এই অচলাবস্থা কাটিয়ে শান্তি ও উন্নতির পথে এগোতে হবে। অসম সরকার রাজ্যের সংবিধান স্বীকৃত সীমানা অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর ও সেই সঙ্গে মিজোরামের আম জনতার কথা ভেবে সে দিকে ফের পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল শুরু করার অনুমতি দিয়ে সকলের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।” মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বরাকের বিধায়কেরা বলেন, এর সঙ্গে স্থানীয় মানুষের আবেগ জড়িয়ে। জোর করে অবরোধ না তুলে, সকলের সঙ্গে কথা বলে, সরকারের বক্তব্য বুঝিয়ে বলে ধাপে ধাপে গাড়ি চলাচল শুরু করানোর চেষ্টা হোক। সেটাই হল শেষ পর্যন্ত। আপাতত ওষুধ, টিকা ও জ্বালানি পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বরাকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী অশোক সিঙ্ঘল ও স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য আজ সন্ধ্যায় লায়লাপুর সীমানায় এসে পৌঁছন। নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে আটকে পড়া ট্রাকগুলি মিজোরামে পাঠানোর ব্যবস্থা শুরু করেন তাঁরা।
মিজোরাম সরকার জানায়, করোনা পরীক্ষার কিট বহনকারী ট্রাকগুলি অসমের দিকে আটকে পড়ায় জোরাম মেডিক্যাল কলেজ-সহ বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। জীবনদায়ী ওষুধ ও ইঞ্জেকশনের অভাবে, অবরোধ শুরুর পর থেকে রাজ্যে অন্তত ২৫ জন করোনা রোগী মারা গিয়েছেন। গন্ডগোল শুরু আগে মিজোরামে করোনার পজ়িটিভিটি হার ১০ শতাংশ পার করেছিল। পরীক্ষা না হওয়ায় সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা। মিজোরামের অনেক মানুষ শিলচর, শিলং, গুয়াহাটিতে আটকে পড়েছেন।
ইন্ডিয়ান অয়েলের তরফে জানানো হয়েছে, ৩১ জুলাই থেকে এক দিন অন্তর চার-পাঁচটি ট্যাঙ্কার উত্তর ত্রিপুরা ডিপো থেকে মিজোরামে যাচ্ছে। ত্রিপুরার দিকেও মিজোরামগামী রাস্তায় ব্যারিকেড ছিল। প্রশাসনের অনুরোধে শুক্রবার থেকে ব্যারিকেড উঠেছে ও অত্যাবশ্যক পণ্যের গাড়ি মিজোরামে গিয়েছে।
এ দিকে কাল অসম ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী সীমানা সমস্যা নিয়ে কমিটি তৈরি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খোদ গুয়াহাটির কয়নাধারা এলাকার পাহাড়ে নিজেদের খুঁটি পুঁতে এলাকয় অধিকার দাবি করল মেঘালয়।