ধ্বংসের আগে ও পরে যমজ অট্টালিকা। ছবি: পিটিআই।
রবিবার দুপুর আড়াইটে। এক দীর্ঘ লড়াই আর বিতর্কের অবসান হল নয়ডায়। গুঁড়িয়ে দেওয়া হল যমজ অট্টালিকা। নয়ডার বুকে মাথা উঁচিয়ে থাকা সেই দুই অট্টালিকা-বিতর্কে যবনিকা পড়ল মাত্র ন’সেকেন্ডেই। ধ্বংস হওয়া দু’টি অট্টালিকার একটির নাম অ্যাপেক্স। উচ্চতা ১০৩ মিটার। ৩২ তলা। অন্য অট্টালিকার নাম সিয়েন। উচ্চতা ৯৭ মিটার। ২৯ তলা।
নভেম্বর, ২০০৪: নির্মাণ সংস্থা সুপারটেক লিমিটেডকে নয়ডার সেক্টর ৯৩এ-তে এমারল্ড কোর্ট নামে হাউসিং সোসাইটি বানানোর বরাত দেয় দ্য নিউ ওখলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি।
২০০৫: ১৯৮৬ সালের নির্মাণ আইন অনুযায়ী এই বছরে যমজ অট্টালিকার পরিকল্পনাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। আর তার সঙ্গে নির্মাণকারী সংস্থাকে ১০ তলার ১৪টি অট্টালিকা তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি বলা হয়, কোনও অট্টালিকার উচ্চতা ৩৭ মিটারের বেশি হবে না।
জুন, ২০০৬: আরও নির্মাণের জন্য সুপারটেক সংস্থাকে অতিরিক্ত জমি দেওয়া হয় একই শর্তে।
নভেম্বর ২০০৯: সোসাইটিতে আরও দু’টি অট্টালিকা বানানোর জন্য পরিকল্পনায় বদল ঘটানো হয়। আর এই পরিবর্তিত পরিকল্পনাতেই যমজ অট্টালিকা নির্মাণের বিষয়টি স্থির হয়। প্রতি অট্টালিকা ২৪ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মার্চ ২০১২: যমজ অট্টালিকার উচ্চতা বাড়িয়ে ৩২ তলা করা হয়। আর এখান থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। সুপারটেক দাবি করে, ২০১০-এর নয়ডা বিল্ডিং নির্মাণের নিয়ম মেনেই যমজ অট্টালিকার উচ্চতা বাড়ানো হয়েছে।
ডিসেম্বর ২০১২: এই ঘটনার পরই দ্য এমারল্ড কোর্ট ওনার্স রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ইলাহাবাদ হাই কোর্টে এই বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে মামলা করে। তাদের অভিযোগ, নির্মাণকারী সংস্থা উত্তরপ্রদেশ অ্যাপার্ট ওনার্স অ্যাক্ট, ২০১০-এর লঙ্ঘন করেছে। শুধু তাই-ই নয়, যেখানে বাগান করা হবে বলে দলিলে দেখানো হয়েছিল, সেই জায়গাতেই অট্টালিকা গড়ে তোলা হয়। নির্মাণ আইন অনুযায়ী, যেখানে দু’টি অট্টালিকার দূরত্ব ৩৭ মিটার হওয়া উচিত, সেখানে ১৬ মিটার দূরত্বে অ্যাপেক্স এবং সিয়েনকে নির্মাণ করা হয়েছে।
এপ্রিল ২০১৪: ইলাহাবাদ হাই কোর্ট যমজ অট্টালিকা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে সুপারটেক সংস্থাকে ওই অট্টালিকার ফ্ল্যাটক্রেতাদের ১৪ শতাংশ সুদসমেত টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, নয়ডা অথরিটির আধিকারিকদের সঙ্গে সুপারটেক সংস্থার একটা আঁতাঁত ছিল। তার পরই যমজ অট্টালিকা সিল করে দেওয়া হয়।
৩১ অগস্ট, ২০২১: ইলাহাবাদ হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় সুপারটেক সংস্থা। হাই কোর্টের নির্দেশ খারিজ করার জন্য আবেদন করে সংস্থাটি। কিন্তু সুপারটেকের আবেদন খারিজ করে ২০১৪ সালের নির্দেশকেই বহাল রাখে। তিন মাসের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরে এক বছর পেরিয়ে যায়।
ফেব্রুয়ারি ২০২২: নয়ডা অথরিটি সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, তারা ভাঙার কাজ শুরু করে দিয়েছে। মে মাসের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করবে।
১৭ মে, ২০২২: সুপ্রিম কোর্ট যমজ অট্টালিকা ভেঙে ফেলার সময়সীমা বাড়িয়ে ২৮ অগস্ট করে।
১২ অগস্ট, ২০২২: সুপ্রিম কোর্ট ফের সময়সীমা বাড়িয়ে ৪ সেপ্টেম্বর করে। কিন্তু ধ্বংসকারী সংস্থা এডিফিস ইঞ্জিনিয়ারিং জানায়, তারা ২৮ অগস্টেই যমজ অট্টালিকা ভেঙে ফেলতে চায়।
রবিবার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ হাজির হয়। দুপুর আড়াইটে নাগাদ ভেঙে ফেলা হল যমজ অট্টালিকা।