পুজোর প্রস্তুতি। রাঁচির রিনপাসে। — নিজস্ব চিত্র।
ঢাকে কাঠি থেকে শুরু করে পুজোর জোগাড়। অঞ্জলি, ভোগ রান্না, সন্ধ্যারতি, এমনকী বিসর্জনের সময় নাচানাচি— সবেতেই অংশ নেন ওঁরা। চারটে দিন গমগম করে হাসপাতাল চত্বর। রোগীদের কাছে যেটা পুজোর উৎসব, ডাক্তাররা কেউ সেটাকে বলেন ‘রিলিজিয়াস থেরাপি’, আবার কেউ বলেন, ‘ফেস্টিভ্যাল থেরাপি’। আদতে মূলস্রোতের সঙ্গে মিশিয়ে রোগীর আত্মবিশ্বাস বাড়ানো। রাঁচি ইনস্টিটিউট অব নিউরো সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (রিনপাস)-এ এটা হয় ফি বছর। এ বারও জোরকদমে টলছে দুর্গা পুজোর তোড়জোড়।
১৯২৫ সালে এই হাসপাতালের যাত্রা শুরু। বছর কয়েকের মধ্যে শুরু হয় দুর্গাপুজো। বস্তুত, ব্রিটিশ আমলে এখানে প্রচুর বাঙালি মনোরোগী ভর্তি থাকতেন। তাই বাঙালিদের প্রধান উৎসব পালনের সিদ্ধান্ত নেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
চিকিৎসকেরা জানান, কোনও রোগী ভোগ রান্না করেন, কেউ মণ্ডপ সাজান। কেউ বা পুজোর জোগাড়ে ব্যস্ত থাকেন। রিনপাসের শিক্ষক-চিকিৎসক পি কে সিংহ বলেন, ‘‘সারা বছর এঁরা এখানে কাজ করে যা উপার্জন করেন, সেখান থেকে কিছু টাকা পুজোয় খরচের জন্য ওঁদের দেওয়া হয়। সেই টাকায় ওঁরা নিজেদের মতো পুজোয় স্টল থেকে খাবার কিনে খান। টুকটাক কেনাকাটা করেন। একটা আপাত স্বাধীন জীবনের স্বাদ পান। পুজো ঘিরে উৎসাহও থাকে খুব বেশি।’’
পুজোর ক’টা দিন রোগীরা যাতে অন্যরকম ভাবে কাটাতে পারেন, তার ব্যবস্থা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মানসিক হাসপাতালেও। ৪ দিন স্পেশ্যাল খাওয়াদাওয়া তো থাকেই, পাশাপাশি থাকে নতুন পোশাকের ব্যবস্থাও। ষষ্ঠী বা সপ্তমীর সকালে রোগীদের বাসে চড়িয়ে ঠাকুর দেখায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তবে এখনও হাসপাতালে পুজোর ব্যবস্থা কোথাওই হয়নি।
রিনপাসের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক অমূল রঞ্জন জানান, অনেক রোগী আছেন যাঁরা স্মৃতিতে ডুবে যান। কেউ বলেন, তাঁদের গ্রামের পুজোর কথা, কারও কথায় চলে আসে পাড়ার ক্লাবের পুজো। বাড়ির পুজোর কথাও বলেন অনেকে। এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘যে রোগী ভর্তি হওয়ার পর থেকে কারও সঙ্গে একটাও কথা বলেননি, গত বছর পুজোয় তাঁর মুখেও কথার খই ফুটল! সেই সূেত্র তাঁর কাছে অনেক তথ্য পেলাম। চিকিৎসায় অনেকটাই সুবিধা হয়েছে। শুধু উনি নন, পুজোর সময়ে রোগীদের স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাব চিকিৎসাতেও সাহায্য করে।’’ চিকিৎসকদের এ সব যুক্তি অবশ্য বোঝেন না এখানে ভর্তি থাকা শোভা মাঝি, ভুপেন্দ্র বক্সি, ওম প্রকাশরা। রিনপাসের পাঁচিলের ঠিক বাইরেই তৈরি হচ্ছে পুজো মণ্ডপ। তাঁরা পাঁচিলের এ পার থেকে দেখেন ও পারে মণ্ডপ তৈরির কাজ কতটা এগোলো। ওঁদের কাছে বাঁশের কাঠামোয় ত্রিপল টাঙানো মানেই পুজো চলে এল। অপেক্ষা করেন, কবে সকালে স্নান করে নতুন পোশাক পরে ওঁরা পা রাখবেন চার দেওয়ালের বাইরে!