ছবি: পিটিআই।
বঙ্গ সিপিএমে সাংগঠনিক পুনর্গঠন শুরু হয়েছে রাজ্য নেতৃত্ব থেকে। সেই মডেল কাজে লাগিয়েই দলের কেন্দ্রীয় স্তরেও রদবদল চাইছেন সীতারাম ইয়েচুরি। বাংলায় কী ভাবে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে পরিবর্তন এবং রাজ্য কমিটিতে নতুন মুখ আনা হল, তার রিপোর্ট নিজেই নিয়ে গিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। পলিটব্যুরোয় এই নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করবেন বলে।
দলের অন্দরে এবং প্রকাশ্যে বারেবারেই ইয়েচুরি যুক্তি দিয়েছেন, আধুনিক যুগ এবং বর্তমান সমাজের সঙ্গে তাল রাখতে গেলে সংগঠনের নানা স্তরে তাজা রক্ত প্রয়োজন। কমিটির পদ আঁকড়ে থাকলাম কিন্তু দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হলাম না, এমন গয়ংগচ্ছ মনোভাব নিয়ে থাকা চলবে না। এই যুক্তি সামনে রেখেই সংগঠনে রদবদলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে আলিমুদ্দিন। সম্মেলন-পর্বের আগে কেন্দ্রীয় স্তরেও সেই কাজ শুরু করতে চান সাধারণ সম্পাদক। সাংগঠনিক হাল-হকিকত জানতে চেয়ে সব রাজ্য কমিটির কাছে ইতিমধ্যেই রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পরে বাংলার উদাহরণ দেখিয়ে আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় কমিটি স্তরেও কিছু পরিবর্তন সেরে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে।
পলিটব্যুরোয় সাধারণ সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ এক সদস্যের কথায়, ‘‘আমরা বলছি, দেশের জনসংখ্যার গড় বয়স যখন চল্লিশের আশেপাশে, তখন দলের কমিটিতেও নেতা-কর্মীদের গড় বয়স কমিয়ে আনতে হবে। এই যুক্তি শুধু একটা রাজ্যে কার্যকর হবে কিন্তু অন্যত্র হবে না— এটা তো হতে পারে না! কঠিন হলেও এই কাজ করতে হবে।’’ সিপিএম সূত্রের খবর, স্বয়ং সাধারণ সম্পাদক রদবদলে আগ্রহী হলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে এখনও এই প্রশ্নে নানা পাল্টা মত, আপত্তি আছে। বাংলার উদাহরণ দিয়েই সেই বিরুদ্ধ মতকে অতিক্রম করার চেষ্টা হচ্ছে। দিল্লিতে অক্টোবরের গোড়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির গত বৈঠকেই বাংলার রাজ্য কমিটির তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, ৬০ বছরের বেশি বয়সের কাউকে কমিটিতে নতুন সদস্য করা হবে না, এই নীতি কার্যকর করা হোক। বাংলায় এই নীতি আগেই চালু হয়েছে।
সিপিএমের সাংগঠনিক বিন্যাসে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যেরা যেমন নানা জেলায় দলের দায়িত্বে থাকেন, তেমনই কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের উপরে নানা রাজ্যের ভার থাকে। দলের সদর দফতরে দায়িত্ব থাকে কিছু নেতার। কিন্তু দায়িত্ব পালনে নানা খামতি সাংগঠনিক পর্যালোচনায় ধরা পড়েছে। ‘নিষ্ক্রিয়’ বা ‘শিথিল’ সদস্যদের বদলে তুলনায় নবীন নেতাদের দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষপাতী ইয়েচুরি। যেমন, বিগত পার্টি কংগ্রেসে দলের একাংশের বিরোধিতায় সফল না হলেও এখন পলিটব্যুরোয় মহারাষ্ট্রের কৃষক নেতা অশোক ধওয়েলেকে অন্তর্ভুক্ত করতে চায় ইয়েচুরি শিবির। আবার কেরল, বাংলা, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, ত্রিপুরার মতো রাজ্যের কয়েক জন নেতা-নেত্রীর বদলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নতুন মুখ নিয়ে আসতে চায় তারা। দলের এই অংশের বক্তব্য, হায়দরাবাদে গত বছর পার্টি কংগ্রেসে নিজের রাজনৈতিক লাইন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়তে গিয়ে সংগঠনের দিকে বেশি নজর দিতে পারেননি ইয়েচুরি। কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখনও পুরনো ‘কট্টরপন্থী’দের নিয়ন্ত্রণ বেশি।
এই ভারসাম্যে বদল আনাই আপাতত ইয়েচুরির শক্ত চ্যালেঞ্জ!