ছবি এএফপি।
কোভিড-১৯-এর টিকা আবিষ্কারের দৌড়ে বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ছে কেন্দ্রের বায়োটেকনোলজি দফতরের অধীনে থাকা ফরিদাবাদের ‘ট্রান্সলেশনাল হেল্থ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’ (টিএইচএসটিআই)। সিন্থেটিক পেপটাইড নির্ভর টিকা তৈরি করছে সংস্থার গবেষকেরা। তবে এর বিশেষত্ব হল, ‘সেল্ফ ডেলিভারি ভ্যাকসিন’। অর্থাৎ নিজেই নেওয়া যাবে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অবশ্য এখনও বাকি। গবেষণার নেপথ্যে রয়েছেন বিজ্ঞানী সুইটি সামল ও বিজ্ঞানী শুব্বির আহমেদ। কী ভাবে কাজ করবে ওই টিকা, কার্যকারিতা প্রমাণ হলে বাজারেই বা আসবে কবে— তা নিয়ে উত্তর দিলেন গবেষকেরা।
প্রশ্ন: ভারত বায়োটেকের কোভ্যাকসিন, জাইডাস ক্যাডিলার জাইকোভ ডি-এর পরে টিএইচএসটিআই-ও টিকা তৈরির দৌড়ে রয়েছে। এ পর্যন্ত যাত্রা কেমন ছিল?
উত্তর: দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলার কোনও প্রতিযোগিতায় আমরা নেই। আমাদের লক্ষ্য হল, কারও সংস্পর্শ ছাড়াই নিজে-নিজে ব্যবহার করা যায়, এমন ভ্যাকসিন প্যাচ (একাধিক সূক্ষ্ম স্তরযুক্ত আবরণ) তৈরি করা, যা সব বয়সের লোকের জন্য কার্যকরী হবে। এটি ‘নেক্সট জেনারেশন ভ্যাকসিন’, নতুন ধাঁচের প্রযুক্তিতে তৈরি। তাই তৈরি করতে কিছুটা সময় লাগবে। আমাদের সংস্থা ইতিমধ্যেই ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকার প্যাচ তৈরিতে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে।
প্রশ্ন: কী ভাবে মানবদেহে কাজ করবে এই টিকা?
উত্তর: করোনাভাইরাস হল আবরণযুক্ত ভাইরাস। এর উপরিভাগে কিছু প্রোটিন রয়েছে, যেগুলি কাঁটার মতো সাজানো থাকে। এদের স্পাইক প্রোটিন বলা হয়। এগুলোর সাহায্যেই মানবদেহে সংক্রমণ ঘটায় ভাইরাসটি। আবার এই বিপজ্জনক স্পাইক প্রোটিনগুলিই আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে (শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) ‘নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি’ তৈরিতে উদ্দীপ্ত করে। এই অ্যান্টিবডিগুলি ভাইরাসের অনুপ্রবেশ আটকানোর ক্ষমতা রাখে। করোনাভাইরাসকে আটকাতে পারে এমন নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি (পেপটাইড)-কে আমরা চিহ্নিত করেছি। সেগুলোর সাহায্যেই ভ্যাকসিন বা অ্যান্টি-ভাইরাল এজেন্ট তৈরি করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লক্ষ পেরিয়ে গেল
প্রশ্ন: কোভ্যাকসিন, জাইকোভ-ডি ও আপনাদের টিকার মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
উত্তর: কোভ্যাকসিন টিকা তৈরি হয়েছে একটি নিষ্ক্রিয়, কিন্তু গোটা ভাইরাসকে ব্যবহার করে। জাইকোভ-ডি একটি ডিএনএ ভ্যাকসিন, স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের ‘ক্যানডিডেট’ ছোট, কৃত্রিম ভাবে ল্যাবে তৈরি পেপটাইড অংশবিশেষ। যা সহজে তৈরি করা যায়। গোটা ভাইরাস বা পুরো স্পাইক প্রোটিনের বদলে, এদের প্রভাবে তৈরি হওয়া পেপটাইডগুলিকে আমরা ল্যাবে কৃত্রিম ভাবে তৈরি করে ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যবহার করছি।
প্রশ্ন: প্রাণী দেহে আপনাদের টিকার পরীক্ষার ফলাফল কেমন?
উত্তর: প্রাণী দেহে ওই টিকার প্রয়োগে যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক ফল মিলেছে।
প্রশ্ন: মানুষের উপর পরীক্ষার ধাপগুলি কী কী?
উত্তর: তিনটি ধাপ। প্রথম ধাপে পরীক্ষা করে দেখা হয় ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ ও তার কার্যকারিতা। মূলত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের উপরে পরীক্ষা হয়। দ্বিতীয় ধাপে দেখা হয়, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, সঠিক ডোজ়। তৃতীয় ধাপে দেখা হবে মিশ্র জনগোষ্ঠীর উপরে টিকার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ শেষ করতেই অন্তত এক থেকে দেড় বছর লাগবে।
আরও পড়ুন: সংক্রমিতের থেকে দূরে থাকাই একমাত্র পথ
প্রশ্ন: কত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকের উপরে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে?
উত্তর: ট্রায়ালের ধাপ অনুযায়ী সংখ্যা নির্ভর করে। প্রথম ধাপে ২০-৩০ জনের ছোট দলের উপরে পরীক্ষা হবে। আবার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা হবে ১৫ হাজার বা তারও বেশি লোকের উপরে।
প্রশ্ন: বাজারে কবে আসবে টিকা?
উত্তর: বাজারে ভ্যাকসিন আনতে আমরা কোনও প্রতিযোগিতায় নামিনি। আমরা বিজ্ঞানী। আমাদের গবেষণাও কিন্তু অন্য ধরনের। এটি একটি প্যাচ। তা ছাড়া, বিষয়টি নিয়ে আরও অনেক গবেষণা প্রয়োজন। অর্থসাহায্যও প্রয়োজন।
প্রশ্ন: কোভ্যাকসিন ও জাইকোভ-ডি-এর তুলনায় আপনাদের টিকার দাম কি সস্তা হবে?
উত্তর: এখনই বলা কঠিন।