প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকায় গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে স্থলসীমা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এসেছেন। এর পরে ছিটমহলগুলি হস্তান্তরের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন হবে। সেই কাজে সমন্বয়ের জন্য মঙ্গলবার কলকাতায় বৈঠকে বসেছিলেন ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। ভূখণ্ড হস্তান্তরের পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বাসিন্দাদের পুনর্বাসন পর্ব শেষ করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এই বৈঠকে। বাংলাদেশের এক অফিসারের কথায়— নভেম্বরের পরে স্থলসীমান্ত নিয়ে আর কোনও বিভ্রান্তি ও মন কষাকষি থাকছে না দু’দেশের মধ্যে। আর ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের অফিসারেরা জানাচ্ছেন, এই বিবাদের অবসান ঘটানোর পর বাংলাদেশ সীমান্তের পুরোটাই কাঁটাতারের বেড়ায় বাঁধতে চায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, যাতে অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান স্থায়ী ভাবে বন্ধ করা যায়।
ঢাকায় চুক্তি স্বাক্ষরের পরে দুই বিদেশসচিবের বৈঠকে ছিটমহল হস্তান্তরের একটি সম্ভাব্য দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। তাতে ঠিক হয়েছে জমি হাত বদলের কাজ শেষ করা হবে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে। ভারত ও বাংলাদেশের অফিসারদের নিয়ে গড়া জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেবিডব্লুউজি) তার আগে ওই এলাকা পরিদর্শন করবেন। ছিটমহলের অধিবাসীরা কে কোন দেশের নাগরিকত্ব চান, সে বিষয়ে সরকারি পর্যায়ে একটি সমীক্ষাও করা হবে। তার পরে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ছিটমহলের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের কাজ শেষ করা হবে। এই কাজের জন্য ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র।
তবে ছিটমহলের বাইরেও বেশ কিছু জমি হস্তান্তর করবে দুই দেশ। একে ‘অ্যাডভার্স পজেশন’ বলা হচ্ছে। দু’দেশের জমির দলিল ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, ছিটমহল ছাড়াও ভারতের ভূখণ্ডের ভিতরে বাংলাদেশের বেশ কিছু জমি রয়েছে। সীমান্ত লাগোয়া এই সব জমির বেশির ভাগেই চাষবাস হয়। একই ভাবে বাংলাদেশের চৌহদ্দির মধ্যে অনেক জমি আদতে ভারতের। ছিটমহল হাত বদলের পাশাপাশি ওই জমিও হস্তান্তর হবে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকবে ২৩৯৮ একর জমি। আর ভারত থেকে বাংলাদেশে যাবে ১৯৫৮ একর জমি। মালদহ, নদীয়া এবং জলপাইগুড়ি জেলার সীমান্ত এলাকায় এই জমি বিনিময় হবে। বিদেশসচিব স্তরের বোঝাপড়ায় ঠিক হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে সীমান্ত নিয়ে কোনও বিভ্রান্তি দেখা দিলে আলোচনায় বসে তারও সমাধান করবে জেবিডব্লিউজি।
ছিটমহল বিনিময়ের পর ভারতে যুক্ত হবে ৭৭১০ একর জমি। ১৭১৬০ একর জমি পাবে বাংলাদেশ। প্রাথমিক সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে— ভারতে যে ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল যুক্ত হচ্ছে, তার প্রায় সব বাসিন্দাই ভারতীয় নাগরিক হিসেবে থাকতে চান। অন্য দিকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে যে ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল মিশছে, তার বাসিন্দাদের একটা ছোট অংশ ভারতে থেকে যাওয়ার অপশন দিতে পারেন। বিদেশ মন্ত্রকের অফিসারেরা জানিয়েছেন, দু’টি ক্ষেত্রেই সেই সব মানুষের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র দেওয়া হবে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে বিদেশসচিব স্তরের ওই প্রস্তাবনায়। বাংলাদেশে মিশে যাওয়া ভারতীয় ছিটমহলগুলির যে সব বাসিন্দা তাঁদের পুরনো বসবাস ছেড়ে ভারতে আসার অপশন দেবেন, তাঁদের আসার জন্য মেখলিগঞ্জ, হলদিবাড়ি ও ফুলবাড়ি— সীমান্তের এই তিনটি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে।