Covid 19

Covid 19: শিথিলতা ডাকতে পারে তৃতীয় ঢেউ

সামনের উৎসবের দিনগুলিতে করোনা বিধি মানার প্রশ্নে সামান্যতম শিথিলতা এ দেশে তৃতীয় ঢেউকে ডেকে আনতে পারে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:১৪
Share:

ফাইল ছবি

ওমিক্রনের কারণে করোনা সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউয়ের শিকার হয়েছে বিশ্বের বড় অংশ। ভারতেও ওমিক্রন প্রথম ধরা পড়ার পরের তিন সপ্তাহে তা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের ১৭টি রাজ্যে। ফলে সামনের উৎসবের দিনগুলিতে করোনা বিধি মানার প্রশ্নে সামান্যতম শিথিলতা এ দেশে তৃতীয় ঢেউকে ডেকে আনতে পারে বলে আজ সতর্ক করে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। তাঁর কথায়, ‘‘ওমিক্রনের ক্ষেত্রে প্রতিষেধক নেওয়া যতটা জরুরি ঠিক ততটাই জরুরি কোভিড বিধি মেনে চলা। কারণ ওমিক্রন প্রজাতির বিরুদ্ধে প্রতিষেধক কেমন কাজ করে তা এখনও অজানা।’’

Advertisement

বিশ্বের ১০৮টি দেশে ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে ওমিক্রন ভাইরাস। যে গতিতে ওই ভাইরাস ছুটছে তা রীতিমতো চিন্তায় রেখেছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র রিপোর্ট উল্লেখ করে এ দিন রাজেশ ভূষণ বলেন, ‘‘দুশ্চিন্তার বিষয় হল ওই প্রজাতি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। বাড়তি অস্ত্র হল সংক্রমণের প্রশ্নে ওই প্রজাতি অতীব শক্তিশালী। ফলে সব মিলিয়ে সমগ্র বিশ্বে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা লাফ দিয়ে বাড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে কোনও একটি স্থানে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে দেড় থেকে তিন দিনে।’’

ভারতেও ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ায় বুস্টার ডোজ়ের দাবিতে সরব হয়েছেন চিকিৎসকদের একাংশ। বিশ্বের বহু দেশে ইতিমধ্যেই বুস্টার ডোজ় দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভারতে এখনও এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে আজ ফের জানিয়েছেন নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পল। তিনি বলেন, ‘‘বিশেষজ্ঞেরা বুস্টার ডোজ় দেওয়ার প্রশ্নে এখনও একমত হননি।’’ কারণ ব্যাখ্যায় রাজেশ ভূষণ হু’র পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে জানান, ‘‘বুস্টারের মাধ্যমে কখনওই অতিমারি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। তাছাড়া বুস্টার কখনওই উৎসবে মাতামাতির ছাড়পত্র হতে পারে না। কেননা বুস্টারের সঙ্গেই কোভিড বিধি মেনে চলাটাও ততধিক গুরুত্বপূর্ণ।’’ রাজেশ বলেন, ‘‘গোটা পৃথিবীতেই দেখা গিয়েছে যাঁরা দুটি ডোজ় নিয়েছেন তাঁদের একটি সময় পরে প্রতিষেধকের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যে অ্যান্টিবডি তৈরি করে তা কমে আসতে থাকে। কিন্তু টি-সেলে করোনা ভাইরাসের প্রতিরূপ থেকে যায়। তাই পরবর্তী সময়ে শরীরে নতুন করে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ হলে তখন টি-সেল প্রতিরোধে সক্রিয় হয়ে ওঠে। যা গুরুতর অসুস্থ হওয়া আটকায়। তাই প্রতিষেধকের কারণে উৎপন্ন অ্যান্টিবডি কমে গেলেই বুস্টার ডোজ় দিতে হবে এমন দাবি সর্বত্র যুক্তিযুক্ত নয়।’’ স্বাস্থ্য কর্তাদের যুক্তি, ভারতের দুটি প্রতিষেধক (কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন) করোনার ওমিক্রন প্রজাতির বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর তা এখনও সম্পূর্ণ ভাবে জানা সম্ভব হয়নি। তা জানা যাওয়ার পরে বুস্টার ডোজ় প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। আজ এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ সংস্থার প্রধান বলরাম ভার্গব জানান, ‘‘বর্তমানে পরীক্ষাগারে ওমিক্রন প্রজাতির ভাইরাস কালচার করার কাজ চালু রয়েছে। তা শেষ হওয়ার পরে দুই প্রতিষেধক কতটা কার্যকর ওমিক্রনের বিরুদ্ধে তা বোঝা সম্ভব হবে।’’ কবে তা জানা যাবে তা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রক স্পষ্ট ভাবে কিছু জানায়নি। সূত্রের মতে, আগামী মাসের মাঝামাঝি চিত্রটি স্পষ্ট হওয়ার কথা রয়েছে।

Advertisement

ভারতে আজ পর্যন্ত যে ৩৫৮ জন ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ১৮৩ জনের উপরে সমীক্ষা চালায় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। দেখা গিয়েছে এঁদের মধ্যে ১২১ জনের বিদেশে যাওয়ার ইতিহাস রয়েছে। দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ জন। তবে ১৮ জন কী ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন তা এখনও জানা যায়নি। ওই ব্যক্তিদের সংক্রমণের উৎস চিহ্নিত না হওয়া রীতিমতো চিন্তায় ফেলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রককে। ওই ১৮৩ জনের মধ্যে ৩৯ শতাংশ মহিলা। বাকিরা পুরুষ। ১৮৩ জনের মধ্যে প্রতিষেধকের দুই ডোজ় নিয়েও আক্রান্ত হন ৮৭ জন। যাঁদের মধ্যে ৩ জন আবার তিনটি ডোজ়/বুস্টার ডোজ নিয়েছেন। এক ডোজ় নিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ২ জন। প্রতিষেধক নেননি ৭ জন। ৭৩ জন প্রতিষেধক নিয়েছেন কি না তা জানা যায়নি। বাকিরা প্রতিষেধক নেওয়ার বয়সের যোগ্যতামান পার হননি। ১৮৩ জন আক্রান্তের মধ্যে উপসর্গ ছিল না ৭০ শতাংশের। ফলে সকলের অলক্ষ্যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছেন বলে স্বীকার করে নিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement