প্রাক্তন সিবিআই প্রধান অলোক বর্মা। —ফাইল চিত্র।
শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে প্রাক্তন সিবিআই প্রধান অলোক বর্মার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তা ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কর্মিবর্গ দফতরে। শাস্তির সুপারিশ গৃহীত হলে, বর্মা শুধু প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পাবেন। সরকারি কর্মী হিসেবে পেনশন, গ্র্যাচুইটি-সহ অবসরকালীন সুযোগসুবিধা পাবেন না।
বিরোধীদের অভিযোগ, সিবিআইয়ে বর্মার অধস্তন ও শাসক শিবিরের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত রাকেশ আস্থানার সঙ্গে বিবাদের জেরেই বেকায়দায় পড়তে হল অলোককে। কংগ্রেসের অভিযোগ, সিবিআইয়ের দুই শীর্ষ কর্তা অলোক ও আস্থানা পরস্পরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের ‘ঘনিষ্ঠ’ হওয়ায় আস্থানাকে সম্প্রতি দিল্লির পুলিশ কমিশনার করে পুরস্কৃত করা হল। অন্য দিকে, অলোকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে অবশ্য দাবি, বর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রমাণ মিলেছে যে, তিনি পদের অপব্যবহার করেছেন তথা সার্ভিস রুল ভেঙেছেন। তাই পদক্ষেপের সুপারিশ। সূত্রের মতে, কর্মিবর্গ দফতর ওই রিপোর্ট ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পাঠিয়েছে। এর পরে সিদ্ধান্ত নেবে তারাই।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিবিআই প্রধানের দায়িত্ব নেন অলোক বর্মা। কিছু দিন পরে সিবিআইয়ে স্পেশাল ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন আস্থানা। পরে বর্মা ও আস্থানা পরস্পরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর মধ্যরাতে বর্মাকে ছুটিতে পাঠায় কেন্দ্র। সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ সেই নির্দেশিকা খারিজ করায় পদ ফিরে পান বর্মা। সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে, তার পরেই বর্মা, তাঁর স্ত্রী, মেয়ে ও জামাইয়ের ফোনে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ঢুকিয়ে আড়ি পাতার চেষ্টা শুরু হয়।
সিবিআই প্রধান বর্মার কাছে রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে বাজপেয়ী আমলের মন্ত্রী অরুণ শৌরি সমস্ত নথি জমা দেন এবং বর্মা তদন্তের দাবি পত্রপাঠ খারিজ করে দেননি। বিরোধীদের দাবি, সেই কারণে বর্মাকে ছুটিতে পাঠানো হয়। কিন্তু আদালতের নির্দেশে তিনি দায়িত্ব ফিরে পেতেই দমকলের ডিজি পদে তাঁকে সরিয়ে দেয় মোদী সরকার। এর প্রতিবাদ জানিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের কুড়ি দিন আগেই আগাম অবসর নেন বর্মা।
অবসরের পর থেকেই বর্মার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছিল। সিবিআই প্রধান থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে মাংস ব্যবসায়ী মইন কুরেশির কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া, রেল-আইআরসিটিসি চুক্তি দুর্নীতি তদন্ত প্রভাবিত করার অভিযোগ এনেছিলেন আস্থানা। আবার সিবিআইয়ের তৎকালীন জয়েন্ট ডিরেক্টর আস্থানার বিরুদ্ধে স্টার্লিং বায়োটেক মামলায় চার কোটি টাকা ঘুষের অভিযোগ ওঠায় সিবিআই ডিরেক্টর অলোক বর্মার নির্দেশে তদন্ত শুরু করেছিল সংস্থা। বর্মার অবসরের পরে অবশ্য সেই মামলায় সারবত্তা খুঁজে পায়নি সিবিআই। আদালতে বেকসুর প্রমাণিত হন আস্থানা।