দেবতা চটে যাওয়াতেই কেরলে বন্যা! বিতর্কিত মন্তব্য আরবিআই কর্তার

আরএসএস-ঘনিষ্ঠ গুরুমূর্তি শনিবার সাতসকালে টুইটারে এ হেন মন্তব্য করে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অনেকেই পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, কেরলের মানুষকে সাহায্য করতে না পারলে অন্তত মুখটা বন্ধ রাখুন। তাতেই প্রশংসা পাবেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৩২
Share:

তিনি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সদ্য নিযুক্ত ডিরেক্টর। ডলারের তুলনায় টাকার দাম কেন পড়ছে, তা নিয়ে মাথা ঘামাবেন, এটাই প্রত্যাশিত। তার বদলে কেরলের বন্যার কারণ খুঁজতে বসে এস গুরুমূর্তির মনে হল, শবরীমালায় মহিলারা ঢোকার অধিকার চাইছেন বলেই দেবতা আয়াপ্পা চটে যাননি তো!

Advertisement

আরএসএস-ঘনিষ্ঠ গুরুমূর্তি শনিবার সাতসকালে টুইটারে এ হেন মন্তব্য করে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অনেকেই পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, কেরলের মানুষকে সাহায্য করতে না পারলে অন্তত মুখটা বন্ধ রাখুন। তাতেই প্রশংসা পাবেন।

কেরলের শবরীমালা মন্দিরে দশ থেকে পঞ্চাশ বছর বয়সী মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেই নিষেধাজ্ঞা তোলার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। এ দিকে কেরলের বন্যায় বিস্তৃত এলাকার মতো শবরীমালা মন্দির চত্বরও জলমগ্ন। শুক্রবার রাত থেকেই কেউ কেউ বলতে শুরু করেন, শবরীমালার প্রাচীন রীতিনীতি বদলানোর কথা উঠতেই আয়াপ্পা ক্ষুব্ধ হয়েছেন! শবরীমালায় সকলের প্রবেশাধিকারের প্রশ্ন ওঠা মাত্র আয়াপ্পা সকলেরই প্রবেশের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন!

Advertisement

শনিবার সকালে এই রকম একটি টুইটই রিটুইট করে গুরুমূর্তি লেখেন, ‘‘কেরলে অতিবর্ষণের সঙ্গে শবরীমালা মামলার যোগ রয়েছে কি না, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা ভেবে দেখতে পারেন। বন্যার দশ লক্ষ সম্ভাব্য কারণের মধ্যে একটা কারণও যদি এটা হয়, মানুষ কিন্তু চাইবে না শবরীমালা মামলার রায় আয়াপ্পার বিরুদ্ধে যাক।’’

গুরুমূর্তির মন্তব্যে বিরোধীরা যেমন সরব হয়েছেন, বিজেপির মহিলা সাংসদ, মন্ত্রীরাও অস্বস্তিতে পড়েছেন। তাঁরা মুখ খোলেননি। সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘গুরুমূর্তি তা হলে কী বলবেন, গুজরাতের ভুজে ভূমিকম্প কার দোষে হয়েছিল?’’

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে অতিলৌকিক যোগ খোঁজার এই প্রবণতা অবশ্য নতুন নয়। ১৯৩৪-এ বিহার-নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পরে মহাত্মা গাঁধী বিবৃতি দিয়েছিলেন, হরিজনদের প্রতি অস্পৃশ্যতার পাপই ওই ভূমিকম্পের কারণ। সেই মন্তব্য নিয়েও প্রভূত বিতর্ক হয়েছিল। কিছুদিন আগে বিজেপি সাংসদ সাক্ষী মহারাজ আবার উত্তরাখণ্ডের বন্যার জন্য রাহুল গাঁধীর কেদারনাথ মন্দিরে দর্শনকে দায়ী করেছিলেন। কাঠমান্ডুর ভূমিকম্পের পরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাধ্বী প্রাচী রাহুলেরই নেপাল সফরের দিকে আঙুল তুলেছিলেন।

কিন্তু একেবারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডিরেক্টরের মুখ থেকে আজ এমন একটি কথা বেরিয়ে পড়ার পরে শাসক শিবিরও ভিতরে ভিতরে বিব্রত। সু্পিরম কোর্টে শবরীমালা মামলার অন্যতম আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ গুরুমূর্তিকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘উনি কেরলের মানুষকে ধর্মের নামে খেপাচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্টকে হুমকি দিচ্ছেন। ওঁর উচিত সংবিধান পড়া। বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরি করা মৌলিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’’ আর এক প্রবীণ আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে বলেন, ‘‘এক সময় কাঞ্চীর শঙ্করাচার্য জয়েন্দ্র সরস্বতীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তোলার ফলে সুনামি হয়েছিল বলেও গুজব ছড়ানো হয়েছিল। এই ধরনের গুজব অঙ্কুরেই বিনাশ করা উচিত।’’

চাপের মুখে গুরুমূর্তি কিছুটা পিছু হটে বলেছেন, ‘‘আমি কিন্তু মানুষের বিশ্বাসের কথা বলেছি। বলেছি, মানুষ চাইবে না...। আমি আয়াপ্পার ভক্ত নই। শবরীমালা মন্দিরেও যাই না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement