—প্রতীকী ছবি।
জিনঘটিত বিরল রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় প্রধান অন্তরায় ছিল অত্যধিক দামি ওষুধ। যা কিনতে বছরে খরচ ছিল কয়েক কোটি। হাতে গোনা কিছু শিশু রোগীর ওষুধের খরচের ভার সরকার বহন করলেও, মাঝেমধ্যে তা-ও অমিল বলে অভিযোগ। এ বার সরকারি সহায়তায় দেশীয় ওষুধ নির্মাতা সংস্থাগুলি সেই ওষুধ তৈরি করায় খরচ কয়েক গুণ কমছে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দেশের ৮.৪ থেকে ১০ কোটি রোগী বিরল রোগে আক্রান্ত। এই রোগগুলির প্রায় ৮০% জিনগত, যার অর্থ হল উপসর্গগুলি সহজে দেখা যায় এবং অল্প বয়সেই চিকিত্সার প্রয়োজন হয়। জানা যাচ্ছে, টাইরোসিনমিয়া টাইপ-১-র জন্য ব্যবহৃত ওষুধ নিটিসিনোনের জন্য এত দিন বছরে খরচ ছিল ২.২ কোটি থেকে সাড়ে ৬ কোটি। দেশীয় সংস্থা প্রস্তুত করায় সেটি কমে হচ্ছে আড়াই লক্ষ। আবার গাউচারস ডিজ়িজে ব্যবহৃত এলিগ্লুস্ট্যাট ওষুধের জন্য বছরে ১.৮ কোটি থেকে ৩.৬ কোটি খরচ হত একজন রোগীর। লিভার বা প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, হাড়ের ব্যথা ও ক্লান্তির উপসর্গ থাকা ওই রোগে চিকিৎসার খরচ নেমে আসছে ৩.৬ লক্ষে। বিরল রোগ নিয়ে কাজ করা চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এ রাজ্যে উইলসনস ডিজ়িজে আক্রান্তের হার বেশি। ওই রোগে ব্যবহৃত ট্রায়েনটাইন হাইড্রোক্লোরাইডের জন্য বছরে হত প্রায় ২.২ কোটি। দেশীয় সংস্থা প্রস্তুত করায় সেটি কমে হচ্ছে ২.২ লক্ষে।
অন্য দিকে জটিল সিজার বা খিঁচুনির সিনড্রোম তৈরি করা ড্রাভেট বা লেনোক্স গ্যাস্টাট সিনড্রোম রোগে খুবই প্রয়োজনীয় ওষুধ ক্যানাবিডিওল ওরাল সলিউশন। বছরে ওই ওষুধ পিছু খরচ ছিল ৭ থেকে ৩৪ লক্ষ টাকা। সেটি কমে হচ্ছে ১ থেকে ৫ লক্ষ। দীর্ঘদিন বিরল জিনঘটিত রোগ নিয়ে কাজ করা চিকিৎসক সংযুক্তা দে বলেন, "কয়েকটি দেশীয় প্রস্তুতকারী সংস্থা ওষুধগুলি তৈরি করার অনুমতি পেয়েছে। খুব শীঘ্রই তা বাজারে আসবে। ওষুধের দাম কমায় সরকারের তরফেও একের জায়গায় একাধিক শিশুর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব হবে। আবার লক্ষাধিক টাকার মধ্যে খরচ নেমে আসায় অনেকে তা বহনও করতে সক্ষম হবেন। তাতে চিকিৎসকদেরও ওই প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগে সুবিধা হবে।" মলিকিউলার জেনেটিক্স বিজ্ঞানী দীপাঞ্জনা দত্তের কথায়, "বিরল জিনঘটিত রোগের ওষুধের খরচ কমে গেলে অনেক রোগী উপকৃত হবেন। আগামী দিনে আরও কিছু বিরল রোগের ওষুধও তৈরি করবে দেশীয় সংস্থা।"